সিদ্ধান্তহীনতা
02-08-2022
১৮ শ্রাবণ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামু আলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। সিদ্ধান্তহীনতা এই কথাটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সব মানুষের জীবনে কোনো না কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে। যে মানুষের জীবনে কোনো উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য নেই আসলে তার জীবন মূল্যহীন বলা যায়।
বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী দেখলেই বুঝা যায়, যারা সফল হয়েছেন সবাই জীবনের লক্ষ্য আগেই নির্দিষ্ট করে রেখেছেন এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে গেছেন। যায়হোক, জীবনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দশম শ্রেণী পাস করার পর। ইচ্ছে ছিল এইস এস সি পাস করে কোনো ভার্সিটিতে পড়ার। কিন্তু সে ইচ্ছাও বাবামায়ের জন্য বৃথা হয়ে গেল। আমার বাবার ইচ্ছে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হোক। সেই লক্ষ্যে আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলো টেকনিক্যাল স্কুলে। কি আর করা! বাবার ইচ্ছে পূরণ করার জন্য চলে এলাম টেকনিক্যাল স্কুলে। ডিপ্লোমা লাইফ তখন থেকেই শুরু হলো। শুরুতে মানিয়ে নিতে কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শিখে গেছি। কথায় থাকেনা পরিবেশ আর পরিস্থিতির মাঝে মানিয়ে নিতে হয়। ডিপ্লোমা লাইফটার সাথেও খুব সহজে মানিয়ে নিয়েছিলাম। গণিতে ভালো থাকায় সার্কিটের ম্যাথগুলো খুব সহজেই বুঝতে পারতাম।
চার বছরের ডিপ্লোমা লাইফের ইতি ঘটবে আর কয়েক মাস পর। এরই মাঝে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই কলেজে বাহির থেকে লোক আসছে এটাচমেন্ট এর জন্য। বেশ কিছু নাম করা কোম্পানির সাথে পরিচিত হতে পেরেছি। কোথায় এটাচমেন্ট করবো এই নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক কাহিনী হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই প্লেন করছে ঢাকা এটাচমেন্ট করার আবার অনেকেই প্লেন করছে বাড়িতে কোনো এক ট্রেনিং সেন্টারে এটাচমেন্ট করার। আমি শুনেছিলাম ভালো কিছু ট্রেনিং সেন্টার থাকে সেখানে ভালো কাজও শেখায়। কিন্তু কথা নিজের আগ্রহ থাকতে হবে। আপনাকে মুখে তুলে কেউ খাইয়ে দিবেনা। প্রতিযোগিতার এই বাজারে টিকে থাকতে হলে কাজের বিকল্প নেই। এখানে আবার আরও কিছু ব্যাপার চলে আসে। এই ধরেন ফ্যামিলিগত সমস্যা তো সবারি থাকে। সত্যি বলতে আমারও ফ্যামিলিগত সমস্যা রয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। সাধ্যের বাইরে কোনো স্বপ্ন দেখতে পারিনা। এই ডিপ্লোমা লাইফ শেষ করে অনেকেই পরিবারের হাল ধরবে। পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়বে কাধেঁ । তবে ডিপ্লোমা লাইফে আসলে যেমন প্র্যাকটিক্যাল কাজ শেখার কথা সেরকমভাবে শেখাও হয়ে উঠেনা। বলতে গেলে আমরা হাতের কাজ তেমন শিখতে পারিনা। কিন্তু জব সেক্টরের দিকে তাকালে দেখা যায় আপনার স্কিল না থাকলে কোনো কোম্পানিই আপনাকে জব অফার করবে না। এতোদিন পরে হলেও বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছি। কথা হলো তিনমাসের ট্রেনিং এ কি সব শেখা সম্ভব? আমার তো মনে হয়না সম্ভব। আবার যাদের কাজের প্রতি প্রবল ইচ্ছে আছে তাদের কাছে আবার ব্যাপারটা সহজ।
ডিপ্লোমার শুরুর দিক থেকেই উচ্চ শিক্ষার প্লেন ছিল আমার। আর ডিপ্লোমাদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর সেটি হলো ডুয়েট। এটাকে অনেকেই স্বপ্নের ডুয়েট বলে থাকে। এটার পিছনেই যে হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্ন লুকিয়ে থাকে। আমারও স্বপ্ন ডুয়েটে পড়াশোনা করার। আসলে প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলে সবকিছুই সহজ মনে হয়। স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে সঠিক পথেই আগাতে হবে। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের পেছনেও টাকার ব্যাপারটা যে চলে আসে। ডুয়েটে ভালো প্রস্তুতি নেয়ার জন্য ভালো একটি কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করতে হয়। মূলকথা হলো একটি গাইডের প্রয়োজন হয়। গাইড ছাড়া আসলে তেমন সামনে আগানো সম্ভব হয়না। আসলে টাকার যে কতটুকু পাওয়ার এটা আমি এখন হারে হারে টের পাচ্ছি। বর্তমানে টাকা না থাকলে আপনাকে মানুষ দুই পয়সার দামও দিবে না। সবকিছুর পেছনে দেখবেন এই টাকার কথাটাই চলে আসে। সত্যি কি জানেন মধ্যবিত্তরা একটু বেশি সমস্যর মধ্যে পড়ে। এই যে আমি। ডুয়েট পড়ার প্রবল ইচ্ছে কিন্তু ঢাকা গিয়ে মেসেথেকে পড়াশোনা করা আবার খরচ। কিন্তু অন্যভাবে যদি চিন্তা করি তাহলে দেখা যায় লক্ষ্যে সাফল্য অর্জন করতে হলে টাকা ও সময় দুটোই লাগবে। পকেটে যখন টাকা থাকেনা তখনই বুঝা যায় আসলে দুনিয়া কত কঠিন।
ফ্যামিলির কথা চিন্তা করলে ডুয়েট পড়ার ইচ্ছেও মারা যায়। কিন্তু আমার বাবার আবার খুব ইচ্ছে ছেলেটা ডুয়েটে পড়াশোনা করুক। ফোন দিয়েই সবসময় আমাকে ভালো করে পড়াশোনা করতে বলে। ডুয়েটের জন্যও প্রস্তুতি নিতে বলে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য হলেও ডুয়েটের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার। কিন্তু আপনি দেখবেন আপনার আশেপাশের মানুষজনই আপনাকে ডিমটিভেট করবে। এটার বাস্তব প্রমাণ আমি নিজেই। আমার বন্ধুরা অলরেডি কয়েকজন ডিমটিভেট করা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আমি আসলে তাদের কথায় তেমন পাত্তা দেয় না। যত এড়িয়ে যাওয়া যায় ততই ভালো। এখন জবের জন্য কাজ করবো নাকি ডুয়েটের জন্য প্রস্তুতি নিবো এটা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। আমার ইচ্ছে ডুয়েট প্রিপারেশন নেয়ার।
যায়হোক, আর বেশি কথা বাড়ালাম না। আপনাদের কাছ থেকেও সুপরামর্শ আশা করছি। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না।আপনার মত আমিও ভুক্তভুগী।তবে আপনার উদ্দেশে একটা কথাই বলবো শুধু নিজের জন্যে বেচে থাকার কোনো মানে হয় না,বাঁচতে হবে নিজের স্বপ্নের জন্য।পিছ কথা ঝেড়ে ফেলুন অ্যাডমিশন এর জন্য প্রস্তুতি নিন।বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
এই সময়টা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাই। যা সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনি নিতে হবে। এডমিশনের ইচ্ছে আগে থেকেই ছিল ভাই, দোয়া চাই ❤️
Twitter share link
আমি মনে করি যার তার কথা না শুনে নিজের এবং নিজের বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলেই বেটার হবে। আপনি ডুয়েটে পড়াশোনা করার জন্য প্রস্তুতি নেন এবং আপনার জন্য অনেক অনেক দোয়া ও ভালোবাসা রইলো।
জি ভাইয়া চেষ্টা করবো ডুয়েটে প্রিপারেশন নেয়ার জন্য। আপনাকে ধন্যবাদ ❤️
সেটাই করা উচিত, নিজেকে প্রস্তুত করুন এবং পরিবারের এবং বাবার ইচ্ছা পূরণ করুন ধন্যবাদ।
সব সময় নিজের মনের কথা শুনতে হয় ভাইয়া।মন যে কাজ করতে চায় সে কাজ করলে সফলতা আসে কারন সেই কাজে মনযোগ থাকে।আর মনের বিরুদ্ধে গেলে সেই কাজে মনযোগ থাকে না। আশা করি সিদ্ধান্তহীনতা দ্রুত কেটে যাবে।বেস্ট অফ লাক।
হ্যা ভাই ঠিক বলেছেন। মনের বিরুদ্ধে আসলে কিছু করতে নেয়। আপনার মন্তব্য পড়ে খুশি হলাম ❤️