রুনা এবং সুমনের কাহিনী।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

হ্যালো বন্ধুরা,

সবাই কেমন আছেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই অনেক ভাল আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে খুবই ভাল আছি। আমি একজন নতুন ব্লগার। আপনাদের সহযোগিতায় এগিয়ে যেতে চাই। আজকে আপনাদের সাথে একটি বাস্তবিক গল্প শেয়ার করব। আশা করবো গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে।

2022-11-03-21-06-37-238.jpg

একটি ফ্যামিলিতে তিনটি মেয়ে। তিন মেয়ে নিয়ে মা-বাবার অনেক সুন্দর ফ্যামিলি। মধ্য ফ্যামিলি বলে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন তাদেরকে। বড় মেয়ের বয়স যখন আট বছর তখন তার বাবা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে মারা যান। এরপর তার মা অনেক কষ্ট করে মেয়েগুলোকে পালন করে বড় করেন। বড় মেয়ের পাশের বাড়ির একটি ছেলের সাথে প্রেম হয়। মেয়েটির নাম হচ্ছে রুনা এবং ছেলেটির নাম হচ্ছে সুমন। সুমনের বাবা নামকরা ডাক্তার এবং তাদের অনেক টাকা পয়সা। ছেলেটি মেয়েটির সাথে প্রেম করে এদের মা-বাবা কেউ রাজি না প্রেমের সম্পর্কটায়।

এভাবে কিছুদিন তাদের প্রেম খুব ভালোভাবেই যেতে লাগলো। এর কিছুদিন পর শোনা যায় তারা কাউকে না জেনে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করলেন। এই কথা শুনে ছেলের মা বাবা ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। ছেলেটি অত্যন্ত ভালো এবং খুব ভদ্র। এরপর কিছুদিন ছেলেটি মেয়েদের বাড়িতে ছিল। মেয়ের বাবা না থাকার কারণে ফ্যামিলিতে অভাবটা বেশি ছিল। এরপর ছেলেটি এলাকায় এবং বিভিন্ন জায়গাতে কাজ করতেন। ছেলেটি মেয়েটিকে অনেক ভালবাসতেন। তাই অনেক কষ্ট করে মেয়েটির পাশে রইলেন। আবার ছেলেটি পড়ালেখা করতেন ওই সময়। ছেলেটি বাইরে কাজ করে মেয়েদের ফ্যামিলিতে টাকা দিতেন এবং তাদের ফ্যামিলি খুব সুন্দর করে তাদের ফ্যামিলির খরচ যোগাতেন।

ছেলেটি মেয়েদের ফ্যামিলির জন্য এবং মেয়ের জন্য অনেক কষ্ট করতে লাগলো। ছেলেটির বাবা ডাক্তার অনেক সময় সে ডাক্তারের দোকানে বসতেন এ কারণে সে সামান্য ডাক্তারিও জানেন। তারপর বাজারে একটি ডাক্তারি ফার্মেসিতে বসতেন। এবং কিছু টাকা পেতেন। এদিকে ছেলের বাবা ছেলেকে দেখলেও কথা বলতেন না। কারণ ছেলেটির বড় দুটি ভাই ছিল তারা এখনও বিয়ে করেননি। ভাই দুটি বাবাকে বলতে লাগলো তাকে ছেলে হিসেবে পরিচয় না দেওয়ার জন্য। এভাবে ছেলেটি প্রায় দুই বছর যাবত অনেক কষ্ট করতে লাগলো মেয়ের জন্য।

একসময় ছেলেটি তার বাবার সাথে কথা বলতেন মাঝেমধ্যে। এবং ছেলের মা মোবাইলে ছেলের সাথে কথা বলেন। কারণ ছেলের বাড়ি এবং মেয়ের বাড়ি পাশাপাশি। অনেক সময় ছেলের মা কাউকে না বলে ছেলেকে কিছু টাকা দিতেন। ছেলেটি তার মায়ের ছোট ছেলে এজন্য। এদিকে ছেলের বাবা মানুষের কাছে অনেক ছোট হয়ে গেলেন কারণ বড় দুটি ছেলে এখনো বিয়ে করেনি আর ছোট ছেলে কাউকে না যে বলে চুরি করে বিয়ে করলেন তাই। এবং ছেলের বড় ভাই একটি স্কুলের মাস্টার । এবং ছেলেটির বড় ভাই অনেক ভাবে তার বাবাকে বলতে লাগল তাকে ছেলে বলে পরিচয় না দেওয়ার জন্য।

এভাবে আরো কিছুদিন যাওয়ার পর তাদের ফ্যামিলিতে একটি ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহন করলেন। এর ফাকে ছেলের মা তাকে কিছু টাকা দিলেন একটি ডাক্তারি ফার্মেসি দেওয়ার জন্য। এরপর ছেলেটি এলাকায় একটি ডাক্তারি ফার্মাসি দিয়েছেন। কিছুদিন ছেলেটি ফার্মিসিটি করলেন। এভাবে কিছুদিন করার পর এলাকার ফার্মেসি দোকান এজন্য দোকানটি বেশি দিন টিকলেন না। এরপর ছেলেটি আবার বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে লাগলো। এমন সময় ছেলেটির বাবা কিছুটা ছেলের জন্য মায়া হয়ে গেল। এবং মাঝেমধ্যে ছেলেটি তার বাচ্চাকে নিয়ে দোকানে আসলে তার বাবা দেখলে কথা বলতেন। একদিন সুমন তাদের বাড়িতে দাওয়াতে গেলেন। এবং তাদের ঘরের দিকে গিয়ে তার মায়ের সাথে দেখা করতে গেলেন। তার বড় ভাই দুইটি ওই সময় ঘরে ছিলেন।

তারা সুমনকে দেখে অনেক ধরনের গালাগালি এবং মারতেও আসলেন। সুমনের মা তাকে মারতে দিলেন না। বড় ভাইদের সামনে সুমনকে বলতে লাগলো কোনদিন বাড়িতে না যাওয়ার জন্য। সুমনকে তার বড় ভাই গুলো বলল রুনাকে সেই তালাক দেওয়ার জন্য। সুমন বড় ভাইদের কে বলল সে কখনো রুনাকে তালাক দেবে না। সে বলতে লাগলো আমি প্রয়োজনে ডেইলি কাজ করে চলবো তারপরও তার ওয়াইফকে সে তালাক দেবে না। এরপর সুমন তাদের বাড়ি থেকে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বাইর হয়ে আসলো। রুনা ও সুমনের জন্য অনেক ভালোবাসা।

এরপর এলাকার কিছু ভালো লোক সুমনের বাবাকে বলতে লাগলো আপনার ছোট ছেলে একটি ভুল করেছে। তাকে তো আপনি আজকে তিন চার বছর ছেলে বলে পরিচয় দিতেছেন না। আপনার ছেলেটি অন্যের কাজ করেন। এবং কত লোক আপনার কাজ করে ব্যাপারটি কেমন দেখা যায়। এসব কথা যখন তার বাবাকে কিছু ভালো লোক বলল। সুমনের বাবার মনে একটু মায়া হল তার ছেলে জন্য। এদিকে সুমনের ছেলের বয়স প্রায় দুই বছর হয়ে গেল। এইসব কথা চিন্তা করে সুমনের বাবা তাকে আফ্রিকা ফাটিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করতে লাগলো। এবং সুমনকে সে খবর দিয়ে তার কাছে নিয়ে কথা বললেন সুমনের বাবা।

তাকে বলল আফ্রিকা যাওয়ার জন্য এত টাকা লাগবে তার বাবা তাকে দেবে কথাটা যেন তার বড় ভাই ও মা না জানে। এরপর সুমন আফ্রিকা যাওয়ার জন্য সবকিছু রেডি করে ফেললেন। এর কিছুদিন পর সুমন আফ্রিকায় চলে যান। সুমন আফ্রিকা যাওয়ার কারণে রুনাদের ফ্যামিলিতে এখন আগের চেয়ে ভালো অবস্থা আসলো। এভাবে সুমন প্রায় দুই বছর হয়ে গেল আফ্রিকায় গেলেন। এখনো সুমন আফ্রিকায় আছেন। এদিকে সুমন যখন বাইরে চলে গেলেন। অন্য একটি ছেলের সাথে রুনার সম্পর্ক হয়ে গেল। এভাবে রুনা অন্য একটি ছেলের সাথে খুব ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে সুমন মোবাইলে কল দিলে সে কথা বলতে চাইতনা। সেও বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দিয়ে ফোনের কথা থেকে এড়িয়ে যেতেন।

বিগত দুই মাস আগে রুনা তার মায়ের কাছে তার ছেলেটি রেখে বলতে লাগল সে একটু মার্কেটে যাবে। এবং বলতে লাগলো ছেলের জন্য কি যেন কিনাকাটা করবে। এরপর রুনা বাজারে গেলেন এবং আর বাড়িতে আসলেন না। এদিকে তারা কাউকে না বলে ভিতরে ভিতরে তারা খোঁজ করতে লাগলেন। এর দুই তিন দিন পর খবর পাই রুনা অন্য একটি ছেলের সাথে পালিয়ে গেলেন। এ কথাটি আস্তে আস্তে এলাকার সবাই জানতে পারেন। এবং সুমনের কাছেও খবরটি জান। এরপর সুমন তার শাশুড়িকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন রুনা কোথায়। রুনার মা তাকে বলল সে অসুস্থ । কারণ সুমনদের পাশের বাড়ির কারণে ব্যাপারটি সুমন অন্য লোকদের থেকে ভালো করে খবর নিয়ে জানতে পারেন।

সুমন রুনার জন্য এত কষ্ট করলেন সেই রুনা এখন সুমনকে ফেলে অন্য একটি ছেলের সাথে পালিয়ে গেলেন। তার বাচ্চাটির কথাও চিন্তা করলেন না রুনা। এখন সুমন রুনার জন্য অনেক ব্যাকুল হয়ে গেলেন। এই দিকে সুমন আফ্রিকা থেকে সব সময় রুনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে লাগলো। কি কারনে এ রুনা কাজটি করলেন। কারণ এখন সুমনের কোন অভাব নেই। সুমন কোনো মতে মানতে পাচ্ছেন না কেনো রুনা এত বড় অন্যায় করলেন। আজ দুই মাস যাবত পালিয়ে গেলেন। এবং নিজের সন্তানের কথাও চিন্তা করেন না। এবং রুনা তার মায়ের সাথে কথা বলেন। এবং তাকে বলল সুমনের বাচ্চাটি তার কাছে দিয়ে দেওয়ার জন্য। এবং রুনার মা সুমনকে বলল তার বাচ্চাটি নিয়ে যাওয়ার জন্য। সুমন রুনার মাকে বলেন বাচ্চাটি তার কাছে রাখার জন্য সে বাচ্চার সব খরচ দেবে। যখন সুমন আফ্রিকা থেকে আসবে তখন তার বাচ্চা সে নিয়ে যাবে। আসলে এরকম ঘটনা অনেক বেশি ঘটে চলেছে। এই ঘটনায় সুমনের জন্য সত্যি ভীষণ খারাপ লাগলো।

আমার পরিচয়

IMG_20221006_094439.jpg

আমার নাম মোঃ জামাল উদ্দিন। আর আমার ইউজার নাম @jamal7। আমি বাংলাদেশে বসবাস করি। প্রথমত বাঙালি হিসেবে আমি নিজেকে অনেক গর্বিত মনে করি। কারণ বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা। তার সাথে ফটোগ্রাফি করা আমার অনেক শখ। আমি যে কোন কিছুর সুন্দরভাবে ফটোগ্রাফি করার চেষ্টা করি। তার সাথে ভ্রমণ করতেও ভীষণ ভালো লাগে। বিশেষ করে নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ করতে ভীষণ ভালো লাগে। তার সাথে লেখালেখি করতে ও ভীষণ ভালো লাগে। যে কোন বিষয় নিয়ে কিংবা যে কোন গল্প লিখতে আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। আর সব সময় নতুন কিছু করার চেষ্টা। নতুন ধরনের কিছু দেখলে করার চেষ্টা করি।
35FHZ8gBpndbrF88KC8i6DmfoqNdVfSnhzJshZCJksDJs27YpCCUjp1oaP6ko3mLJbQtLE76ZKc5r3aFXKh8EK2Xg2XbxHP97436Dksrat...K3RRDcGvdyC6bx3TE39Zctd2ho1pJ1hm9nj6RC6gfhhSEVDEf6zHmiqsgBwDTEDG8onxfxrWKe5ZMmiwAvtnX6XvsCqykCT5aFqMFBq2wcdKNs74j1RgTuza3g.png

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjde9gvbjDSDFUe2t87sHycAo9yh4cXNBQ2uKuZLC2jPzA8Qx5HRSqkJDxCm2F1P...XMCuWWrUK8WEzc1spvbtGymKcxp9cSaiY7YD7nmGv2yy3TJjQK1R5Bx6mMsJqHLdPZ4gBXB1M3ZGWR3ESWZxh8hd9tvb68pfdL8xHrioiqDnHuRUqd8FYt5aog.png

ধন্যবাদ সবাইকে

Sort:  
 last year 

আমাদের সমাজে এরকম অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে এখন। সুমন কতই না কষ্ট করেছিল রুনার জন্য শেষ পর্যন্ত সেই অন্য ছেলের সাথে পালিয়ে গেল সুমনকে ছেড়ে। শেষের দিকে পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। রুনা তার ছোট বাচ্চার জন্য ও একটু চিন্তা করল না। খুবই ভালো ছিল আপনার আজকের এই গল্প।

 last year 

রুনা এইকাজ করবে কল্পনার বাইরে ছিল। সুমন তাকে এত ভালোবাসতো। সে তার নিজের ছোট বাচ্চার কথা চিন্তা করলো না। সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last year 

রুনা একদম ঠিক কাজ করনি। সুমন তাকে ভালবেসে বিয়ে করলেন ফ্যামিলিকে না জানিয়ে। রুনার জন্য সে এত কষ্ট করলেন। কিন্তু সুমন আফ্রিকা যাওয়ার পর সে অন্য একটি ছেলের সাথে পালিয়ে গেলেন। সত্যি এসব ঘটনাগুলো বাংলাদেশে এখন প্রায় ঘটতেছে। আপনি অনেক সুন্দর করে ঘটনাটি আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

 last year 

সুন্দর একটি বাস্তব ঘটনা আপনাদের মাঝে আমি শেয়ার করলাম। সবার কাছে সুমন এখন অনেক ছোট হয়ে গেল। রুনার জন্য এত কিছু সে করল। খুব সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 63149.00
ETH 3156.91
USDT 1.00
SBD 3.85