মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য

in #busy5 years ago

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি । পূর্বে এর নাম ছিল পুন্ড্রবর্ধন বা পুন্ড্রনগর । একসময় মহাস্হানগড় বাংলার রাজধানী ছিল । ২০১৬ সালে এটি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয় । এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে । এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় । বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিঃ মিঃ উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে মহাস্থানগড় অবস্থিত ।

ইতিহাস
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন ( ১০৮২ - ১১২৫ ) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল । মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকতো তার ভাই নীল এর সাথে । এ সময় ভারতের দক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্হান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাক্ষণ এখানে আসেন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে । কারণ তিনি পরশু বা কুঠার দ্বারা মাতৃহত্যার দায়ে অভিশপ্ত ছিনেল । পরবর্তীতে তিনিই এই দুই ভাইয়ের বিরোধের অবসান ঘটান এবং রাজা হন । এই ব্রাক্ষণের নাম ছিল রাম । ইতিহাসে তিনি পরশুরাম নামে পরিচিত । কথিত আছে পরশুরামের সাথে ফকির বেশি আধ্যাত্মিক শক্তিধারী দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রঃ) এর যুদ্ধ হয় ( ১২০৫ - ১২২০ ) সালে এবং যুদ্ধে পরশুরাম পরাজিত ও নিহত হন ।

মহাস্থানগড়ের দর্শনীয় স্থানসমুহ:

১। মাহী সওয়ার মাজার শরীফ
মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে একটি ঐতিহাসিক মাজার শরীফ রয়েছে । পীরজাদা হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রঃ) কে কেন্দ্র করে প্রাচীন এই মাজার শরীফটি গড়ে ওঠেছিল । কথিত আছে মাছের পিঠে আরোহন করে তিনি বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন । তাই তাকে মাহী সওয়ার বলা হয় । প্রচলিত এক গল্প থেকে জানা যায়, হযরত মীর বোরহান নামক একজন মুসলমান এখানে বাস করতেন । তিনি পুত্র সন্তান মানত করে গরু কোরবানী দেয়ার অপরাধে রাজা পরশুরাম তাকে বলির আদেশ দেন । তাই তাকে সাহায্য করতেই মাছের পিঠে আরোহন করে মাহী সওয়ারের আগমন ঘটে ।

**কালীদহ সাগর **
মহাস্থাগড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন । কালীদহ সাগর সংলগ্ন ঐতিহাসিক গড় জড়িপা নামক একটি মাটির দূর্গ রয়েছে । প্রাচীন এই কালীদহ সাগরে প্রতিবছর মার্চ মাসে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বারুনী স্নান অনুষ্ঠিত হয় । স্নান শেষে পুণ্যার্থীগণ সাগর পাড়ে গঙ্গা পূজা ও সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ।

শীলাদেবী ঘাট
মহাস্থানগড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে 'শীলাদেবীর ঘাট' ।শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন । এখানে প্রতিবছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে ।

জিউৎকুন্ড কুপ
মহাস্থান গড়ের শীলাদেবীর ঘাটের পশ্চিমে জিউৎকুন্ড নামে একটি বড় কুপ আছে । কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত । যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি ।

জাদুঘর
মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল ও সেন যুগের বিভিন্ন দ্রব্যাদিসহ অনেক দেবদেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে যা গড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে অবস্থিত আছে । মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে ।

বেহুলার বাসর ঘর

মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২ কিঃ মিঃ পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিনেল বলে মনে করা হয় । স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট । স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোছল খানা । এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত ।

গোবিন্দ ভিটা
মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই অবস্থিত । গোবিন্দ ভিটা একটি খননকৃত প্রত্নস্থল । গোবিন্দ ভিটা শব্দের অর্থ গোবিন্দ ( হিন্দু দেবতা ) তথা বিষ্ণুর আবাস । কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নিদর্শন এ স্থানে পাওয়া যায়নি । তবুও প্রত্নস্থলটি স্থানীয়ভাবে গোবিন্দ ভিটা নামে পরিচিত ।

ভাসু বিহার
ভাসু বিহার বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন । এটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়, মহাস্থানগড় থেকে ৬ কিঃ মিঃ পশ্চিমে বিহার ইউনিয়নের ভাসু বিহার নামক গ্রামে অবস্থিত । স্থানীয়রা একে নরপতির ধাপ হিসেবে চেনে । ধারণা করা হয়, এটি একটি সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ । খননকার্যের ফলে সেখানে ব্রোঞ্জের বৌদ্ধমূর্তি, পোড়ামাটির ফলকসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু আবিষ্কৃত হয়েছে । মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৮ কিঃ মিঃ পশ্চিমের বিহার গ্রামটিতে বিপুলসংখ্যক বৌদ্ধযুগীয় ইমারতের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে । গ্রামটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নাগর নদের তীরে ৭,০০,৬০০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসাবশেষকেই ১৮৭৯ সালে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম, হিউয়েন সাং বর্ণিত এবং ইতিহাসখ্যাত ভাসু বিহার বলে শনাক্ত করেছিলেন । দশম শতাব্দীতে নির্মিত বৌদ্ধ বিহার দুটোর মধ্যে একটি বড় অন্যটি ছোট । বড়টি উত্তর দিকে ছোটটি দক্ষিণে অবস্থিত ।
কালের আর্বতনে এর বর্তমান নাম দাঁড়িয়েছে মহাস্থানগড় । বিভিন্ন কারণে মহাস্থানগড় প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে । দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন প্রত্নস্থল বলে সারা পৃথিবীর পর্যটক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে মহাস্থানগড় বিশেষভাবে আকর্ষণীয় ।

Sort:  

You got a 62.65% upvote from @brupvoter courtesy of @shah95!

You got a 25.00% upvote from @bid4joy courtesy of @shah95!

You got a 46.53% upvote from @emperorofnaps courtesy of @shah95!

Want to promote your posts too? Send 0.05+ SBD or STEEM to @emperorofnaps to receive a share of a full upvote every 2.4 hours...Then go relax and take a nap!

You got a 25.00% upvote from @redlambo courtesy of @shah95! Make sure to use tag #redlambo to be considered for the curation post!

You got a 0.49% upvote from @minnowvotes courtesy of @shah95!

You got a 25.00% upvote from @whalecreator courtesy of @shah95! Delegate your Steem Power to earn 100% payouts.

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 63855.79
ETH 3113.00
USDT 1.00
SBD 4.04