বাড়িতে রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎযাপন
নমস্কার বন্ধুরা। বেশ দুই/ তিন দিনের ভীষণরকম ব্যস্ততা কাটিয়ে আজ সময় বার করে পোস্ট লিখতে বসলাম। এই দিনগুলোতে আমার চাওয়ার সত্বেও আমি পোস্ট লিখে উঠতে পারিনি। আমি ভীষণই দুঃখিত এ ব্যাপারে। প্রত্যেকদিন পোস্ট লিখতে লিখতে এমনই একটি অভ্যাস তৈরি হয়, একদিন না লিখলে খুব খারাপ লাগে।
আমার পরীক্ষা চলছে, সাথে রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন প্রতি বছরই আমি ব্যস্ত থাকি । এই সমস্ত কারণে শরীরও ভেঙে পড়ে। আজকে আমার শরীরের যা পরিস্থিতি, তাতে আমার খুব ভালোভাবে বেশ অনেকটা সময় ঘুমের প্রয়োজন।
ছোট থেকে ইচ্ছা ছিল বাড়িতে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করব। রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন সকাল থেকে এখানে সেখানে প্রোগ্রাম করতে করতে এই ইচ্ছা আর পূরণ করা হয়নি। তবে এবারে ভেবেই নিয়েছিলাম ,আমি সন্ধ্যাবেলায় বাড়িতে একটু ছোট করে হলেও রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করার চেষ্টা করব।
সেই মতোই আমার পাশের বাড়ির বৌদি এবং জেঠিনের সহযোগিতায় উদ্যোগ নিলাম। তারপর মা বাবা এবং আমার ছোট ভাই ঈশান খুব সাহায্য করল। সাথে অনুষ্ঠান এর জন্য আমি আমার গানের স্যার, আমার শিক্ষক, তার পরিবার ,কিছু বন্ধুদের , আমার প্রিয় মানুষদের আমন্ত্রণ জানালাম।
আসলে কিছু কাজ প্ল্যান করে উঠলেও করা হয়ে ওঠে না। নানান রকম বিপত্তি চলে আসে ,সেই মতোই আমি ভয় পাচ্ছিলাম ।তাই বেশি আগে থেকে অন্যরকম আয়োজন শুরু করিনি ।রবীন্দ্রজয়ন্তীর আগের দিন থেকেই আমার সমস্ত রকম কাজ শুরু হয়। এর ওপর লেগে রয়েছে গানের প্র্যাকটিস ।এত এত গান প্র্যাকটিস করা সময়ের ব্যাপার ।
এভাবে আগের দিন কোনরকম ভাবে কিছুটা কাজ এগিয়ে রাখলাম। পরের দিন সকাল বেলায় আমার প্রোগ্রাম ছিল। তারপর সেখান থেকে ফিরে এসে দুপুর থেকে পুরো আমি কাজে লেগে পড়ি। বাড়িতে অনুষ্ঠান করতে অবশ্যই এনার্জি দরকার।
বিগত কিছু মাস হল আমার মায়ের শরীরটা ঠিক নেই। তাই মায়ের উপর কোন আবদারও করা যাবে না। পাশের বাড়ির বৌদি এবং ঈশান আমাকে অনেকটা সহযোগিতা করল। আমি এর আগেই পোস্টে জানিয়েছি আমাদের ওপরের ফ্লোরগুলো কমপ্লিট করা হচ্ছে। একদম তিন তলাতে আমাদের একটি ঘর আছে ।যেখানকার কাজ মোটামুটি সব কিছুই কমপ্লিট। শুধু রং করা বাদ দিয়ে। আমি ঠিক করেছিলাম সেই ঘরটি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিষ্কার করে, সেখানে আয়োজন করব।
দুপুর থেকে ঘর পরিষ্কারের কাজে লেগে পড়লাম। তারপর নিচের বাগান থেকে কিছু সুন্দর সুন্দর গাছ এবং ইনডোর প্ল্যান্টগুলো ওপরে তিন তলার ঘরে নিয়ে গেলাম। মোটামুটি সব সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার পরে, একটু রেস্ট নিতে হল।
তারপর ঘুম থেকে উঠে দেখি ঝমঝম করে বৃষ্টি। বৃষ্টি দেখে সাধারণত আমি ভীষণ খুশি হই। এর আগের পোস্টেই আপনাদের আমি জানিয়েছি আমি শীতকাল এবং বর্ষাকাল কতটা পছন্দ করি ।কিন্তু গতকালের বৃষ্টি আমার কাছে একদমই আনন্দের ছিল না। স্বাভাবিক ।কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হলে বৃষ্টি যদি আসে ,কাজে ভীষণ পরিমাণে ব্যাঘাত ঘটে ।তার ওপর যারা দূর থেকে আসবে তাদেরও আসার অসুবিধা হয় ।
সব মিলিয়ে মন মেজাজ যখন একেবারেই খারাপ। তখন মা এবং আমার বন্ধু আমাকে ভরসা দিল যে আমি যেন এইভাবে মুখ গোমরা করে না থেকে নিজের কাজগুলো এগিয়ে রাখি। আর ওদের কথামতো একটু পরেই বৃষ্টি থামল। আমি যেমনটি চেয়েছিলাম তার থেকেও সুন্দর করে অনুষ্ঠানটি ঠিকঠাক মতো পালন করতে পেরেছি।
আমরা মোট ১৫ জন মতন ছিলাম। খুব ঘরোয়া করে এই আয়োজন হয়েছিল। গান ও কবিতা নিয়ে পুরো অনুষ্ঠানটি গমগম করছিল।
প্রথমে সমবেত সংগীত গাওয়া হলো। আমার একটি পছন্দের রবীন্দ্র সংগীত 'প্রেমেরও জোয়ারে' এই গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হলো। তারপরে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমি নিজের বক্তব্য রাখলাম। তারপর এক এক করে গান, ছোটদের আবৃত্তি ।এভাবে পরপর অনুষ্ঠান চলতে থাকলো। দেখতে দেখতে কখন যে সময় কেটে গেল কেউ টের পাই নি।
ছোটদের আনন্দ আমাকেও বেশ তৃপ্তি দিচ্ছিল। এদিকে খাওয়া-দাওয়ার জন্য সিঙ্গারা ,মিষ্টি এবং কোলড্রিংসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গান গাইতে আমি কখনো হাপিয়ে যাই না। আমি যে কতগুলো গান গেয়েছি পরপর ,তার ঠিক নেই। আমার পাশের বাড়ির বৌদি ,আমার বাবা ,ঈশান ,আমার শিক্ষক ,আমার খুব কাছের একজন কাকিমা এবং বাচ্চারা সবাই গান গেয়েছে। সাথে আমি রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতাও পাঠ করেছি।আমার বাবা আমার শিক্ষক এবং আমি একসাথে যখন গান ধরলাম বেশ মজা লাগছিল গান গাইতে।
আমার ভাই ছোট্ট হলেও কখন যে আমার থেকে শুনে শুনে কিছু কিছু গান মুখস্ত করে রপ্ত করে ফেলেছে সুরগুলোকে ,তা আমি টেরও পাইনি। ওর গলায় এত সুন্দর গান শুনতে পেরে আমার নিজেরও ভালো লাগলো ।
সব মিলিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত সাড়ে দশটা। শুরু করেছিলাম সন্ধ্যে ৭টার পরপর। কবিগুরুর আশীর্বাদে আমার ইচ্ছা পূরণ হল।
আজকের মতন এখানেই শেষ করছি ।অনুষ্ঠান সংক্রান্ত যাবতীয় গান ,কবিতা আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করব পরের পোষ্টের মাধ্যমে।
TEAM 5
Congratulations! Your post has been upvoted through steemcurator08.আমিও নিজে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তুমি এই দিনটাতে বরাবরই ব্যস্ত থাকো তা আমি জানি। এই দিনটা খুব সুন্দর ভাবে পালন করা হয়েছিল। সমস্ত ব্যাপারটা তুমি খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছো। এই ভাবেই তুমি এগিয়ে যাও আমার শুভকামনা রইল।