জাপানি উপকথা : "বীর মোমোতারো" - পর্ব ০৮


1280px-Momotarō_ehon.jpg

Creative Commons License Under Fair Usage Policy : Source - Wikimedia


দুই ভয়াল সঙ্গীর সাথে পথ চলতে চলতে ক্রমে দ্বীপের একদপম শেষ প্রান্ত এসে গেলো মোমোতারো । এই ক'দিন সঙ্গী কুকুর আর বাঁদরের সাথে ভারী ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো মোমোতারোর । আর সুস্বাদু মিষ্টি পিঠে খেতে পেয়ে জন্তু দু'টিও খুব কৃতজ্ঞতাবোধ করতে লাগলো মোমোতারোর প্রতি । মোমোতারোর মন মেজাজ এখন খুবই ভালো । দ্বীপের শেষপ্রান্তে খুব ভালো ভাবেই পৌঁছতে পেরেছে সে, তাছাড়া চলার পথে দু'জন শক্তিশালী সঙ্গী খুঁজে পেয়েছে সে । ওনিদের শায়েস্তা করতে তার দুই সঙ্গীর যে খুবই প্রয়োজন হবে সেটা বুঝতে পেরেছে মোমোতারো ।

সাগরপাড়ে এসে একটু খোঁজাখুঁজি করতেই বহু পুরোনো সেই জেটির দেখা পেলো মোমোতারো । জেটিতে একটি মাত্র নৌকোই বাঁধা রয়েছে দেখতে পেলো সে । দস্যুদের ক্রমাগত উৎপাতে সাগরে জেলেরা মাছ ধরতে এখন যায়ই না বলতে গেলে । জেটির কাছাকাছি ছোট্ট একটা গ্রাম আছে । এই গ্রামে বেশ কয়েক ঘর জেলেদের বাস । দস্যুদের উৎপাতে তারা এখন বার সমুদ্রে মাছ ধরতে বড় একটা বের হয় না । সাগরের তীর ধরে অগভীর জল আর খাঁড়িতে মাছ ধরে তারা ।

তাই মোমোতারো যখন তাদের কাছে গিয়ে ওনিদের দ্বীপে যাওয়ার জন্য একটা নৌকো ভাড়া করতে গেলো তখন তার ইচ্ছে শুনে গাঁয়ের সবাই ভয়ে শিউরে উঠলো । কেউই মোমোতারোকে নিয়ে ওই ভয়াল দ্বীপে যেতে চাইলো না । মোমোতারো তখন প্রচুর অর্থ দিতে চাইলো যদি কেউ তাকে ওনিদের দ্বীপে নিয়ে যেতে পারে । কিন্তু, প্রাণের চাইতে অর্থ তো আর বড় নয়, তাই কেউই রাজি হলো না । ব্যর্থ হয়ে ভগ্ন মনে মোমোতারো আবার সেই সাগরতীরে জেটিতে এসে দাঁড়ালো ।

এমন সময় সে দেখতে পেলো সেই যে ছোট্ট নৌকোটা সে জেটিতে বাঁধা দেখে গিয়েছিলো সেটাতে একজন মাঝি নৌকো বাইছে । নৌকোটা এখন জেটি থেকে কিছুটা দূরে ঢেউয়ে ভাসছে । খুব সম্ভবতঃ মাছ ধরতে যাচ্ছে । মোমোতারো মুখের কাছে দু'হাত রেখে চোঙার মতো বানিয়ে গলা ফুলিয়ে মাঝিকে ডাকতে লাগলো ।

এমন সময় বলা নেই কওয়া নেই কোত্থেকে বিশাল একটা হাঙরমুখো পাখি এসে মোমোতারোর কাঁধের পিঠার থলিতে দিলো এক রাম ঠোক্কর । তারপরে থলিটি এক হ্যাঁচকা টানে মোমোতারোর কাঁধ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেই পাখিটা ফের উড়াল দিতে যাবে এমন সময় মোমোতারো লাফিয়ে উঠে খপাৎ করে পাখিটির একটা পা ধরে ফেললো । পাখিটা মোমোতারোকে ঝেড়ে ফেলার বহু চেষ্টা করলো । বিশাল দুটি ডানার ঝাপটে চারিদিকে ঝড় উঠলো যেনো, সেই সাথে কর্কশ গলায় চেঁচাতে লাগলো পাখিটি ।

সেই চিৎকার শুনেই মোমোতারো পাখিটির মুখের ভাষা পড়ে নিলো । পাখিটি পিঠার থলিটা হাতাতে চায় । পিঠার মিষ্টি গন্ধে সে পুরো দিশেহারা । মোমোতারো তখন সেই হাঙরমুখো ভয়ালদর্শন পাখিটিকে উদ্দেশ্য করে বললো, "পিঠে তোমার খুব প্রিয় বুঝি ? কিন্তু, এমনি এমনি তো এই পিঠা আমি তোমাকে দিতে পারবো না । আমি মোমোতারো, আমার হাত থেকে তুমি কোনোক্রমেই এই পিঠার থলি ছিনিয়ে নিতে পারবে না । তবে হ্যাঁ, তোমাকে আমি অনেক পিঠা খাওয়াবো যদি তুমি আমার অভিযানের সঙ্গী হও । আমি চলেছি ওনিদের দ্বীপে । দস্যুদের সাথে লড়াই করতে । তুমি কি যেতে চাও আমার সাথে ? তবে, এটা মনে রেখো দস্যু ওনিরা কিন্তু খুবই বিপদজনক ।"

মোমোতারোর কথা শুনে পাখিটি সঙ্গে সঙ্গে থলিটি ছেড়ে দিলো । আর খুব খুশিমনে মোমোতারোর সঙ্গী হতে রাজি হয়ে গেলো । মোমোতারো তাকে একটা সুস্বাদু মিষ্টি জোয়ারের পিঠা খেতে দিলো । খুশিতে একদম বাকবাকুম হয়ে গেলো সেই বিশাল ঠোঁটের পাখিটি । মোমোতারোর অন্য দুই সঙ্গীর সাথে সে দারুণভাবে মিশে গেলো ।

[ক্রমশঃ]

Sort:  
 20 days ago 

অনেক সুন্দর একটি গল্প আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে এরকম গল্পগুলো পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে। গল্পটি পড়ে মনে হচ্ছে গল্পটি বেশ রহস্যজনক। যাহোক সুন্দর এই গল্পের পরবর্তী পর্বটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

 20 days ago 

মোমোতারোর দল ভারী হতে দেখে বেশ ভালই লাগছে, আশা করা যায় দ্রুতই সে ওনিদের দ্বীপে যেতে পারবে এবং যুদ্ধে জয় লাভ করবে।

 20 days ago 

মোমোতারো তাহলে খুব শীঘ্রই ওনিদের দ্বীপে যেতে পারবে। কারণ এখন আর কোনো বাঁধা নেই। তার সাথে যেহেতু তিনজন সঙ্গী রয়েছে, তাহলে খুব সহজেই ওনি দস্যুদের হারাতে পারবে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.13
JST 0.032
BTC 65035.33
ETH 2950.72
USDT 1.00
SBD 3.66