আমার মায়ের আচঁল ছিল আমার ব্যাংক।।
আজকে ভেবেছিলাম একটি নাটক রিভিউ শেয়ার করবো। গতকালই সেই প্রস্তুুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তুু আজকে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মোবাইলটা হাতে নিতেই নোটিফিকেশন পেলাম “আজকে বিশ্ব মা দিবস”। সাত দিনে সাপ্তাহ যায়, তিশ দিনে মাস যায়, ৩৬৫ দিনে বছর যায়। কোনদিন তো মাকে নিয়ে কিছু লেখা হয় না। আর মাকে ভালোবাসতে কোন দিবসও লাগে না। মাকে সবসময় ভালোবাসি,কিন্তুু বলা হয়নি। মায়ের শত অবদানেরও কোনদিন মাকে ধন্যবাদ জানানো হয় নি। আর আমি ছোট থেকেই বাড়ির বাইরে থাকার কারনে মাকে আলাদা ভাবে কিছু বলা হয় নি। যত দুরেই থাকি,ক্ষণে ক্ষণে মায়ের চেহেরা ভেসে উঠে। মায়ের জন্য মনের ভিতর হাজারো ভালোবাসা পুষে রেখেও কোনদিন মাকে বলা হয়নি মা তোমাকে ভালোবাসি। মায়ের সন্তান হিসেবে সবসময় অবচেতন মনেই নিজেকে মায়ের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করি। তাই হয়তো কখনো আলাদা ভাবে মাকে ধন্যবাদ দেওয়া হয়ে ওঠেনি। মায়ের কাছে যতটা থাকে আশা ও আবদার, ঠিক ততটাই থাকে অভিমান ও অভিযোগ। তবে মায়ের নিজের সাধ্যের মধ্যে সব সন্তানেরই আবদার পুরন করেন।
আমার মায়ের আচঁল ছিল আমার ব্যাংক। ছোট সময় যখন স্কুলে পড়তাম, স্কুলে যাওয়ার সময় দুই একদিন পর পর দুই টাকা পাঁচ টাকা করে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে যেতাম। মা সবসময় আচঁল থেকেই টাকা বের করে দিতেন। তবে আচঁলের মধ্যে টাকা কিভাবে আসতো, কোথায় থেকে আসতো, সেটা আমার অজনা ছিল। তখন দুই টাকা ,পাঁচটাকা পেলেই আনন্দে আত্নহারা হয়ে যেতাম। আমার এখনো মনে আছে তখন ২৫ পয়সা,৫০ পয়সা দিয়ে আইসক্রিম কিনে খেতাম। এক টাকা দিয়ে কলা,নারিকেল,দুধ,দই দিয়ে বানানো আইসিক্রম পেতাম। তখনকার ৫০ পয়সা, একটাকা দামের আইসক্রিমের স্বাদ এখন ২০ টাকা ৩০ টাকার আইসক্রিমের মধ্যেও পাওয়া যায় না।
আমার বাবা তেমন বড় ঘরের সন্তান ছিলেন না। আমার দাদা ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। বাবাকে শত পড়ানোর চেষ্টা করা হলেও পড়াশোনার প্রতি তার তেমন ঝোঁক ছিল না। তিনি দাদার সাথে ব্যাবসা বানিজ্য করতেন। যখন যে কাজ পেতেন সেটাই করতেন। আমাদের একটাই জমি ছিল,সেটাতে ধান চাষ করতেন,মা হাঁস মুরগি পালন করতেন আর একটি গরুও ছিল। সব মিলিয়ে আমাদের তেমন অভাব ছিল না। আর তেমন টাকা পয়সাও ছিল না। এখন আমাদের অবস্থান মোটামুটি অনেক ভালো,আলহামাদুল্লিাহ। আমার এখনো মনে আছে আমি যখন বুঝতে শিখি তখন আমাদের খঁড়ের ঘর ছিল। আমাদের প্রথম চক আর সিলেট দিয়ে পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়েছিল। তারপর ধিরে ধিরে খাতা কলম দিয়ে পড়া খেলা শুরু করি। দুই একদিন পর পর আমার কলম হারিয়ে যেতো, তখন একটি কলম বিক্রয় করতো তিন টাকা। মায়ের কাছে বললে প্রথমে ধমক দিলেও স্কুলে যাওয়ার সময় ঠিকই আচঁল থেকে বের করে পাচঁ টাকা দিতো। তিন টাকা দিয়ে কলম কিনে, দুই টাকার আইসক্রিম খেতাম।
আমার অন্যান্য ভাইবোন থেকে আমি পড়াশোনায় একটু ভালোছিলাম। যার ফলে আমার দিকে মায়ের একটু আলাদা নজর ছিল। ঘরের মুরগির ডিম,হাঁসের ডিম, গরুর দুধ সবাই না পেলেও আমি ঠিকই পেতাম। ছোট সময় আমি খুব জেদি ছিলাম। সব কিছু নিয়ে জেদ করতাম। ঘরে ভালো খাবার রান্না না হলে খেতাম না। কত রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে গেছি তার কোন সঠিক হিসাব নেই। সবাই ঘুমানোর পড়ে মা ঠিকই রাতের বেলা এগারোটা বারোটার দিকে ঘুম থেকে তুলে খাবার খাওয়াতেন। আজকে মাকে ছাড়া কত বছর দুরে আছি। কিন্তুু মায়ের ভালোবাসা এখনো অনুভব করি।
যখন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি তখন সবাই প্রাইভেট পড়লেও আমরা টাকার অভাবে প্রাইভেট পড়তে পারতাম না। অন্যান্য স্টুডেন্টের মায়েরা আমার মায়ের কাছে এসে বলতো প্রাইভেট পড়লে ভালো রেজল্ট করতে পারবো। মা তেমন বেশি শিক্ষিত ছিল না। তবে পড়াশোনার গুরুত্ব ঠিকই বুঝতো। হঠাৎ করে একদিন আমাদের দুই ভাইকে পাশের বাসার শেখ ফরিদ ভাইয়ের সাথে তার স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে বললো। তখন আমি আর আমার বড় ভাই এক সাথে ক্লাস ফাইভে পড়তাম। ফাইনাল পরিক্ষার আগে তিন মাস আমরা প্রাইভেট পড়েছি। মাস শেষে হলেই মা আমাকে ঘরের পালিত কয়েকটা হাঁস মরুগি ধরে বাজারে বিক্রয় করতে পাঠাতেন। যতক্ষন দেখা যায় মা আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। নিজের শখের পালিত জিনিষ বিক্রয় করে দিতে কতটা কষ্ট লাগে,সেটা তখন মায়ের চেহেরা দেখে বুঝতে পারতাম। আমি নিজে বাজারে গিয়ে সেই হাঁস মুরগি বিক্রয় করে সেই টাকা মায়ের হাতে দিতাম। পরের দিন বিকাল বেলা প্রাইভেট পড়ার সময় মা আমাকে সেই হাঁস মুরগির বিক্রয় করার টাকা হাতে দিয়ে বলতেন প্রাইভেট স্যারকে দিতে।
সবসময় খাতা কলম, পরিক্ষার ফি’র টাকা মা আচঁল থেকে বের করে দিতেন। এসএসসি পরিক্ষার সময় নির্ধারিত টাকা দেওয়ার পরে আচঁল থেকে বের করে একশো টাকার একটি নোট দিয়ে বলেছিলেন। এটা দিয়ে কিছু কিনে খেতে। যেদিন আমার এসএসসি রেজাল্ট দিয়ে ছিল,সেদিন আমি রোদের মধ্যে আমাদের জমির খেড় শুকাচ্ছিলাম। এক হুজুর স্যার আমাদের ঘরের মোবাইলে কল দিয়ে জানায় আমি এ+ পেয়েছি। মা খুশি হয়ে তৎক্ষনাৎ আচঁল থেকে পাঁচশো টাকা বের করে,আমার হাতে দিয়ে বলেছিলেন সব শিক্ষকদের যেন মিষ্টি কিনে খাওয়ায়। আমি জানি না মায়ের আচঁলে টাকা কোথায় থেকে আসতো। তবে আমি এটাই জানতাম টাকার দরকার পড়লে মা আচঁল থেকে বের করে দিবেন। মায়ের আচঁল ছিল আমার ব্যাংক। এক মাত্র মায়ের অবদানের জন্যই আজকে দুই একটি অক্ষর বলতে পারি,লিখতে পারি। আজকে দুরে থেকেও মাকে অগনিত ধন্যবাদ জানায়। মা তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি😥।।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
সত্যি ভাইয়া মায়ের আঁচল সন্তানের জন্য ব্যাংক।এতো কষ্ট করে মা বড় করে তুলেছেন।সেই মায়ের অবদান আজ আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন এটা আপনার মায়ের বড় প্রাপ্তি।আপনি তাকে ফিল করছেন।এই অনুভূতি কতজন সন্তানের মাঝে আছে বলেন তো।তাইতো মা নামক ব্যাংকটিকে আমাদের যত্ন করতে হবে।তার অবদানের কথা মনে রেখে তাকে ভালোবেসে পাশে থাকতে হবে সব সময়।ধন্যবাদ অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।
জী আপু মাকে সবসময় মিস করি। মায়ের অবদান ভুলার মত না। ধন্যবাদ।।
আপনার পোস্ট টি পড়তে গিয়ে আবেগে আপ্লূত হয়ে গেছি ভাইয়া।চোখের কোনে জল চলে এসেছে আপনার মায়ের ভালোবাসা দেখে। মায়ের আঁচল থেকে টাকা দেয়ার কথা গুলো পড়ে।সব মায়ে এমনি হয় ভাইয়া।মায়ের সাথে কারো তুলনা হয় না।মায়ের ভালোবাসার কাছে সব বৃথা।মাকে এতো ভালোবাসি জন্য ই হয়তো ভালোবাসি বলা হয় না কোনদিন।
ধন্যবাদ খুব সুন্দর মা দিবসে মনের জমানো কথা গুলো আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
জী আপু মায়েরা এমনই হয়, তাদের অবদান রক্ত দিয়েও শোধ করা যাবে না। ধন্যবাদ।
প্রতিটি সন্তানদের আবদারের জায়গা থাকে তাদের মা। বাবার কাছে খুব বেশি আবদার না করলেও মায়ের কাছে তাদের আবদারের শেষ থাকে না। খুব ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে। আপনার মায়ের শখের পালিত হাঁস মুরগি থেকে আপনাদের পড়ালেখার জন্য টিচার রাখাটা বেশি জরুরি মনে করেছিলেন জন্যই তিনি সেগুলো বিক্রি করে আপনাদেরকে দিয়েছে। মায়েরা তো এমনই হয়। নিজেদের সুখের কথা চিন্তা না করে সন্তানের সুখের কথা চিন্তা করে। যাক ভাইয়া আপনার মায়ের খেয়াল রাখবেন।
বাবা দাদার সাথে ব্যবসার জন্য বিভিন্ন বাজারে,মাঠে ঘাটে থাকতো। সব আবদার মা পুরন করতো। ধন্যবাদ।
আমাদের জীবনে মায়ের অবদানের কথা কখনো বলে শেষ করা যাবে না। মায়ের আঁচলে আসলেই সব সময় টাকা থাকতো। আমাদের টাকার প্রয়োজন হলে মা আঁচল থেকেই দিত এটা আমার ক্ষেত্রেও কিন্তু হয়েছে। আমাকে কতটা ভালোবাসি এটা কখনো বলা না হলেও, এটাই জানি মাকে অনেক ভালোবাসি। নিজের পালিত হাঁস মুরগি গুলো বিক্রি করে দেওয়ার কষ্টটা মায়েরা কখনো প্রকাশ করত না। মায়ের প্রতি বড় হওয়ার পর আমাদের যে দায়িত্বটা রয়েছে, এটা সব সময় মাকে ভালোবেসে পালন করতে হবে। পৃথিবীর সকল মায়ের জন্য ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রইল।
জী ভাইয়া মার কাছে টাকা থাকলেই আঁচলে বেঁধে রাখতো। সন্তান চাইলেই বের করে দিতো। ধন্যবাদ।
ছোট বেলায় বেশিরভাগ ছেলে মেয়েদের ব্যাংক ছিল মায়ের আঁচল। ছোট বেলায় যখন মায়ের কাছে থেকে টাকা পয়সা চাইতাম, তখন আমার আম্মু তার আঁচল থেকে কিছু টাকা বের করে দিয়েছিল, এটা প্রতিনিয়ত দিয়েছিলেন আমাকে। আপনি আজকে অসাধারণ একটি বিষয় নিয়ে লিখছেন। আপনার লেখা গুলো থেকে অনেক কিছুই জানতে এবং শিখতে পারলাম।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা।
জী ভাইয়া মায়েরা ছেলে মেয়েদের জন্য সব কিছু করতে পারে। মায়েদের অবদান বেশি থাকে। ধন্যবাদ।
ভাইয়া খুব সুন্দর কথা লিখেছেন একটি বছরের মধ্যে এতগুলো দিন যায় তারপরেও একটি দিন মাকে নিয়ে লেখার কোন সুযোগ হয় না আমাদের। সত্যিই মাকে ভালোবাসার জন্য কোন দিন এর প্রয়োজন হয় না, যে কোন সময় যে কোন দিন মা কে ভালোবাসা যায়। ভাইয়া প্রতিটা মায়ের আঁচল যেন সব সন্তানের কাছে ব্যাংক মনে হয়। আমিও ছোটবেলায় এভাবেই মায়ের আঁচল থেকে টাকা খুলে নিয়ে যেতাম। আমারও অজানা থাকতো সেই টাকাগুলো কিভাবে মায়ের আঁচলে আসতো। তবে হয়তো বড় হওয়ার সাথে সাথে সে মুহূর্তগুলো হারিয়ে গিয়েছে কিন্তু সেই স্মৃতিগুলো এখনো মনে হলে খুব ভালো লাগে। তখন টাকার মূল্য বেশি ছিল, বর্তমানে টাকার কোন মূল্যই নেই। তাই তো এত টাকা দিয়ে জিনিস কিনেও সেই স্বাদ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। মাকে নিয়ে লেখা আপনার পোস্ট পড়ে খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি ব্লগ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
জী আপু কোনদিন তো স্পেশাল ভাবে মাকে নিয়ে কিছু লেখা হয় না, আজকে মা দিবস উপলক্ষে সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
আমরা মাকে নিয়ে যতই লিখতে যাবো, যতই বলতে যাব ততই কম পড়ে যাবে। কারণ আমাদের জন্য তো মায়ের ভালোবাসা থাকে অপরিসীম। আমাদের জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তো আমাদের মা-ই পালন করে। আর মা শব্দটা কতই না ছোট, কিন্তু এটার গভীরতা অনেক বেশি। আর মায়ের আঁচলের টাকার কথা কি বলবো । মায়ের কাছে যখনই টাকা খুঁজেছি তখনই দেখেছি মা আঁচল থেকে নিয়েই টাকা দিয়েছে। আসলে মা বাবা তো তখনই সফল হয়, যখন নিজের সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, আর তাদের পড়ালেখার ভালো দেখে। অনেক ভালো লেগেছে আপনার লেখাগুলো।
জী আপু মায়ের ঋণ কোনদিন শোধ করতে পারবোনা, মায়ের মত পৃথিবীতে আর কেউ নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসবে না।