বনফুল কে নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - শেষ পর্ব

in #newlast month

ঘনিষ্ঠভাবে পাশাপাশি শুয়ে প্রাগ্‌বিবাহ জীবনের প্রেমের স্বপ্ন দেখেছে। স্ত্রী ছিল অন্যবাঞ্ছিতা, স্বামী আর একটি তরুণীর প্রণয়-প্রত্যাশী। কিন্তু বাস্তব জীবনে কুমার-কুমারীর প্রেম মর্যাদা পায়নি। তাই দাম্পত্য জীবনে পরস্পর পরস্পরের বক্ষোলগ্ন হয়েও মনে মনে কত ব্যবধান ! ‘অমলা’রও একই পরিণাম। বিয়ের প্রস্তাব যাদের সঙ্গে হয়েছে তাদের নিয়ে কখনো কল্পনায়, কখনো প্রত্যক্ষ-দর্শনে কত স্বপ্নই না সে গড়েছে! কিন্তু কোথাও বা দরে বনল না, কোথাও পছন্দ হল না মেয়ে। অবশেষে যেখানে মেয়েও পছন্দ হল, দরেও বনল, এবং বিয়েও হয়ে গেল, সেখানে আর যাই হোক্ পাত্র সম্পর্কে স্বপ্ন রচনার অবকাশ নেই। মোটা কালো গোলগাল হৃষ্টপুষ্ট ভদ্রলোক, সদাগরি অফিসের চাকুরে। তবু অমলা সুখেই আছে! 6. দাম্পত্য-জীবনের ট্রাজেডি একপক্ষে অত্যন্ত শোকাবহ এবং অন্যপক্ষে হাস্যকর হয়ে উঠেছে ‘অদ্বিতীয়া' গল্পে। স্ত্রী প্রভাবতীর ধারণা ছিল যে, স্বামীর জীবনে সে অদ্বিতীয়া। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ পাবার মাস তিনেকের মধ্যেই পত্নীব্রত স্বামীটি দ্বিতীয়বার বিবাহের প্রস্তাবে রাজি হলেন, এবং যথাযথ গোঁফ কামিয়ে তরুণ সেজে বিবাহও করে বসলেন। ষড়যন্ত্রটি ছিল শ্যালিকার। রহস্যমোচন হল ফুলশয্যার রাত্রে। নববধূর সঙ্গে মিলনের অনেক আশা ও আশঙ্কা নিয়ে স্বামীটি বাসর ঘরে ঢুকে দেখেন সাতটি সন্তান পরিবৃতা তাঁর প্রথমাই পালঙ্কে বসে তাঁর প্রতীক্ষা করছেন।

IMG_6575.jpg
পুরুষ-পরীক্ষায় শ্যালিকার এই বাজিরাখা রসিকতা স্বামী স্ত্রী উভয়কেই যে বাস্তবসত্যের সম্মুখীন করল তা শুধু উপভোগ্যই নয়, মর্মান্তিকও বটে! পুরুষ- জাতি সম্বন্ধে নারী-সাধারণেরই আরেক ধরনের মনোভাব এবং তার সত্যাসত্য পরীক্ষিত হয়েছে ‘ছেলে মেয়ে' গল্পে। মাতৃসদনে উত্তীর্ণযৌবনা আন্নাকালী এবং সপ্তদশী নমিতা পাশাপাশি খাটে শুয়ে আছেন। দুজনেই আসন্ন প্রসবা, এখন তখন হয়ে আছেন। স্বভাবতই আলাপ জমে উঠল এবং দেখা গেল যে পতিনিন্দায় উভয়েই পঞ্চমুখ। উভয়েই যেন ঘোরতর পুরুষবিদ্বেষী। তারপর যথাকালে দুজনেই সন্তানবতী হলেন। আন্নাকালীর অষ্টম গর্ভের সন্তানটিও হল মেয়ে। পক্ষান্তরে নমিতা একটি পুত্রসন্তানের জননী-গৌরব অর্জন করে ধন্য হল। আন্নাকালী কন্যা দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন, এ মেয়ে তাঁর হতেই পারে না, তাঁর বিশ্বাস তাঁর ছেলে হয়েছে; নিশ্চয়ই নার্সগুলো ষড়যন্ত্র করে শিশু বদল করে দিয়েছে। প্রতিবাদে হাসপাতালের নৈশ নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে আন্নাকালী চিৎকার করতে লাগলেন। এ গল্পে নারীমনস্তত্ত্বের আলোছায়াময় একটি দিক পরিহাসরসিক পুরুষের লেখনীমুখে কৌতুকাবহ বক্রহাসির সৃষ্টি করেছে। । কিন্তু দাম্পত্য-জীবনাদর্শের চরম ট্রাজেডির চিত্রটি মূর্ত হয়ে উঠেছে ‘পরিবর্তন' গল্পে। অবৈজ্ঞানিক অন্ধ-পতিভক্তির পরিণাম কত শোকাবহ হতে পারে, সেই সত্যই 'পরিবর্তন এর মুখ্য উপপাদ্য। স্বামী হরিমোহনের যক্ষ্মা হয়েছে। স্ত্রী সরমার অক্লান্ত পতিসেবা ত্রুটিহীন। কিন্তু সেবাযত্ন সত্ত্বেও যক্ষ্মার প্রকোপ যেদিন নিশ্চিত মৃত্যুর আশঙ্কা বহন করে এনেছে সেদিন স্ত্রীর এক অদ্ভুত আচরণ ধরা পড়ে গেল। সরমা গোপনে হরিমোহনের উচ্ছিষ্ট দুগ্ধ পান করেছে। তার যুক্তি, স্বামী যদি না বাঁচেন, তার বেঁচে লাভ কি? এর পরিণাম প্রাকৃতিক নিয়মে যা অনিবার্য তাই হল, সরমার দুটো লাভ্সই আক্রান্ত হল, অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেল না। হরিমোহন কিন্তু সেরে উঠেছিল। বড়লোক সে। সুইজারল্যাণ্ডে গিয়ে প্রভূত অর্থব্যয়ে কালব্যাধির হাত থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় হয়ে দেশে ফিরে যথারীতি আবার বিয়ে করেছে। অবশ্য সেবাময়ী পতিব্রতা পত্নী সরমাকে সে ভুলতে পারেনি, তাই বেছে বেছে সরমা নাম্নী একটি মেয়েরই সে পাণিপীড়ন করেছে। পতিব্রতার এও কি পুরস্কার!

Sort:  

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @fxsajol,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

Coin Marketplace

STEEM 0.24
TRX 0.12
JST 0.030
BTC 69837.94
ETH 3620.96
USDT 1.00
SBD 3.20