রবীন্দ্র জয়ন্তী
কেমন আছো বন্ধুরা? আশা করি সবাই ভালো আছো। আমিও ভালো আছি। আজ আমি লিখব কিভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করলাম,সেই নিয়ে। আশা করি আপনাদের সবার ভালো লাগবে।
আমি আগের পোস্টেই বলেছি যে এ বছর বাড়িতে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করেছি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানে। এই দিন যে যার নিজের মতন করে পালন করে। আমরা যেহেতু বাঙালি তাই আমাদের কাছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা আলাদা জায়গায় আছে। রবীন্দ্রনাথকে ছাড়া বাঙ্গালীদের চলেনা। আমরা ছোট থেকেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা, গান ,বই পড়ে বড় হয়েছি। আমাদের ছেলেবেলায় রবিঠাকুরের লেখা সহজপাঠ বইটি পাঠ্য ছিল,সেটা সকলেই জানে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ।মৃত্যু ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্ম গ্রহণ করেছিলেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। তিনি ছোট থেকেই একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। ঠাকুর পরিবারে সকলেই ছিলেন খ্যাতিনামা ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার লেখা ঘরে -বাইরে থেকে আমরা তার ছোটবেলা সম্পর্কে জানতে পারি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ভারতী ও বালক পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন ।কথা কাহিনি, সহজপাঠ, রাজশ্রী ,ছেলেবেলা, শিশু ভোলানাথ হাস্যকৌতুক, ডাকঘর নানান রচনাগুলি আমাদের খুবই প্রিয়। তার লেখা অজস্র কবিতা, গান, ছোট গল্প, উপন্যাস প্রবন্ধ আছে এবং তিনি ছবিও এঁকেছেন। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি জন্য এশিয়ার মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পান। দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশ জাতীয় সংগীতও তার রচনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর রচিত গানগুলি গীতবিতান নামের বইতে কয়েক খন্ডে রয়েছে।
এবার শুরু করি আমরা রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন কি কি করলাম। এদিন যখন রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করব তখন থেকেই খুব বৃষ্টি শুরু হল। আমার স্টুডেন্টরা আগেই পড়তে চলে এসেছিল। ওদের পড়ানো শুরু করে শেষ হয়ে গেল তবুও বৃষ্টি থামছিল না। যাইহোক কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি কমে গেল ,আমরা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ অনুষ্ঠান শুরু করলাম। অনুষ্ঠান শুরু হতে প্রথমে ঈশা গান দিয়ে শুরু হল। তারপর আমার স্টুডেন্ট কেউ কবিতা বলল ,কেউ আবার ঈশার হারমোনিয়াম এর সাথে গানের সুর ধরল। তাদের তো এসব কিছু করার অভ্যাস নেই ,তাই ভয় পেয়ে যাচ্ছিল ।কেউ কেউ নিজের নাম বলে কবিতার লাইন ভুলে যাচ্ছিল। কেউ আবার একটু কবিতা বলে পরের লাইন ভুলে যাচ্ছিল।
যাইহোক ওদের কবিতা গান শেষ হলো। এবার শুরু করলো ঈশান গান করা। ঈশান হলো ঈশার ভাই। তারপর ঈশার মা মানে,আমার কাকিমা বলল তুমি একটা গান কর। আমি তো প্রথমে লজ্জা পাচ্ছিলাম। যাইহোক ওদের কথা মত আমিও একটা গান গাইলাম। আমার তো অভ্যাস নেই, জানিনা কেমন হয়েছে। সুর তাল কিছুই জানিনা। ঈশা গাইল ওর সাথে আমি একটু গাইলাম।
এরপরে ঈশার এক কাকিমা এসেছিল, সেও একটু গাইল। তারপর ওর বাবা গাইলো। আমাদের অনুষ্ঠানের শেষের দিকে তখন ঈশার বাংলা স্যার, মেয়ে এবং তার স্ত্রী এসে উপস্থিত। তখন তারাও এসে বলে আমরা ঈশার গান শুনবো। স্যারের বউ একটা কবিতা পড়ে শোনায়।তারপর স্যার নিজের লেখা কবিতা পড়ল ।কবিতাটি খুব সুন্দর ছিল। উনার স্ত্রী নাকি আবৃত্তিতে খুব ভালো। উনার মেয়ে গান গেয়ে শোনায়। এই ভাবেই আমাদের অনুষ্ঠান অনেকক্ষণ চলেছে। প্রায় রাত সাড়ে দশটা ।
এরপর সবাই চলে গেলে আমরা মানে , ঈশা আর আমি একটু দুজনে মিলে ছবি তুললাম ।দিয়ে কিছু জিনিস দুজনে মিলে নিচে নামিয়ে নিয়ে চলে আসলাম। অনুষ্ঠান চলাকালীনই আমরা বাচ্চাদের খেতে দিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ ওরা অনেক বিকেলে এসেছিল আমার কাছে পড়তে। আর যারা এসেছিল বলছিল বাড়ি ফিরব, তাদেরও অনুষ্ঠান চলাকালীনই খেতে দিয়ে দিয়েছিলাম। শেষে আমরা দুজনে খেয়ে নিলাম। সেদিন বেশ পরিশ্রম হয়েছিল আমাদের দুজনেরই।
রাতে বাড়ি গেলাম। আমার শাশুড়ি মা তো দেখে অবাক। বলছিল এতক্ষন লাগলো। মা বলছিল যে তোমাদের অনুষ্ঠানের লোকই পাচ্ছিলে না ,কিন্তু এতক্ষণ অনুষ্ঠান চললো। বাহ।
আপনাদের একটা কথা বলাই হয়নি। আমার শাশুড়ি মা তো খুব নাচানাচি করেছিল গান গাইবে বলে ,কিন্তু মা গান গাইতে পারেনি। কারণ সেদিন দুপুরবেলায় হঠাৎ করে ফোন আসে যে আমাদের একটা দূর সম্পর্কের জেঠু মারা গেছেন। শুনে মায়ের তো খুব মন খারাপ, তাই মা আর গান গাইতে পারলেন না। আমার বর ছিল না। ও কাজের জন্য গ্রামের বাড়িতে ছিল। ও যখন শুনলো আমি রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করেছি। ও তো খুব খুশি।
ও থাকলে আরেকটু খুশি হতাম আমি। কারণ ও গান করতে পারে ,তবলা বাজাতে পারে। ও ছোট থেকে নাকি এইসব বিষয়ে খুব আগ্রহী। মায়ের কাছ থেকে শোনা ও নাকি ছোট থেকেই রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতো। মাকে বলত মা তুমি রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে সাহায্য করো, আমাদের গান শেখাও ,নাটক শেখাও । মা তো ছেলেকে খুব ভালোবাসে। তাই ছেলের কথা অনুযায়ী মা সেইসব পালন করত। আজও ওর রবীন্দ্রনাথের মূর্তিটি বাড়িতে রয়েছে।
আজ অনেক কিছু লিখে ফেললাম। তবে আমার খুব আনন্দ হয়েছে সব কিছু নিজে হাতে করতে পেরে।
আপনারা অনেক সুন্দর করে রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন করেছেন এবং স্টুডেন্ট দ্বারা গান পরিবেশন এবং আমার মনে হয় সবথেকে ভালো গান পরিবেশন করত আপনার শাশুড়ি অনুষ্ঠানে আপনার শাশুড়ি না থাকায় অনেকটা মিস করেছেন। আপনাদের জেঠু মারা যাওয়াতে আপনার শাশুড়ি ওইখানে চলে যাওয়াই আপনাদের অনুষ্ঠানটি সুন্দর হইছে থাকলে আরো সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠিত হতো। ধন্যবাদ আপনার পোস্টের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পারলাম ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এই প্রথমবার আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে রবীন্দ্র-জয়ন্তী পালন করেছিলাম। আমি অনেকদিন ধরেই পড়াই । এই প্রথমবার আমার ইচ্ছে পূরণ হলো। আমার শাশুড়ি গান গাইতে পারলে আমি আরো খুশি হতাম।
দিদি আপনাকে ধন্যবাদ আপনার সুন্দর কিছু মহুর্ত আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের বাঙ্গালী জাতির অহংকার। আপনি কবিগুরু সম্পর্কে কিছু তথ্য আমাদের দিয়েছেন। এছাড়াও রবীন্দ্র জয়ন্তির দিনটি আপনি কিভাবে কাটিয়েছেন সেটি আমাদের জানিয়েছেন।
আপনার লিখাটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনার আগামী লিখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন।
আপনাকে ও অনেক ধন্যবাদ দিদি। আমিও খুব খুশি হয়েছি আপনাদের সামনে রবীন্দ্রজয়ন্তী সম্পর্কে কিছু তুলে ধরতে পেরে। এই ভাবেই আমার পাশে থাকবেন।
ঈশা দিদি আর আপনি মিলে রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিনটা তবে সুন্দরভাবেই উপভোগ করেছেন, এবং বাকি যারা এসেছে সবাই এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে। কেউ গান গেয়েছে কেউ কবিতা সত্যি কথা বলতে প্রথম প্রথম হয়তোবা দেখা যায়, লোক পাওয়া যায় না যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে ধীরে ধীরে অনেক লোক এসে যুক্ত হয়। যেমনটা আপনাদের ক্ষেত্রেও হয়েছে।
আপনার শাশুড়ির ইচ্ছাটা পূরণ হলো না, কারণ ওনার এক আত্মীয় মারা গেছে। আসলে এ ধরনের অনুষ্ঠানে হঠাৎ করে যদি কেউ মারা যায়। মনটা এমনিতেই খারাপ হয়ে যায়। যাই হোক ধন্যবাদ আপনাকে, সবার সাথে কাটানো আনন্দঘন মুহূর্তটা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ঈশানা থাকলে এসব কিছুই করতে পারতাম না । আমার শাশুড়ির ইচ্ছেটা পূরণ হলো না আমিও খুব দুঃখিত। আমরাও ভাবতে পারিনি আমাদের অনুষ্ঠানে এতজন অংশগ্রহণ করবে। এই ভাবেই আমার পাশে থাকবেন।
বৌদিদি, তুমি পোষ্ট করা এত সুন্দর করে শিখেছো, খুব ভালো লাগছে আমার। আরো অনেক কিছু শিখতে হবে। তাড়াতাড়ি চলে এসো। খুব ভালো হচ্ছে।
তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। আজ হয়তো তুমি না থাকলে আমি এসব কিছুই করতে পারতাম না। শুধু চাইবো তুমি ভালো থাকো সুস্থ থাকো, জীবনে এই ভাবেই এগিয়ে যাও। তুমি ছাড়া আমার পথ চলা সহজ হতো না । তোমার মত বন্ধু পেয়ে আমি সত্যিই খুব খুশি। হয়তো তোমার সাথে বন্ধুত্বটা আগে হলে আমি আরো কিছু করতে পারতাম। চেষ্টা করব তোমার কাছ থেকে আরো কিছু শেখার। এই ভাবেই পাশে থেকো।
আমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজনই নেই। তুমি কাজ করতে যে কতটা ভালোবাসো তা আমি এখন আরো ভালোভাবে বুঝতে পারছি। তুমি বাড়িতে এমনিতেও খুব পরিশ্রম করো মাটির কাজের পেছনে। এরপরেও যে তোমার কাজের প্রতি এতটা ভালোবাসা। তা আমাকে খুবই মুগ্ধ করছে। আমি এবং আমার মা ভীষণ খুশি । তুমি এভাবেই কাজ করে যাও এবং তোমার অনেক ভালো হোক। এবং আমাদের ভেতরে যে সুন্দর বন্ধুত্ব রয়েছে, তা টিকে থাকুক।