জেনারেল রাইটিং-পরীক্ষার ফলাফল এবং শৈশব স্মৃতি||

in আমার বাংলা ব্লগ16 days ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আজ এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। আসলে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে চারপাশে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। আর এই উৎসবমুখর পরিবেশে আমার শৈশবের একটি কষ্টের স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। তাই তো আমি আমার সেই স্মৃতি সবার মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি ভালো লাগবে।


পরীক্ষার ফলাফল এবং শৈশব স্মৃতি:

sad-219722_1280.jpg

Source


খুব সম্ভবত আমি তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। আমার এখনো সেই দিনটির কথা মনে পড়ে। স্কুল ছুটি পেলেই গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। ছুটির দিন এলেই গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যেতে ভালো লাগতো। কোন এক বৃহস্পতিবার আমরা সবাই গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। আর সেই বৃহস্পতিবার বিকেল বেলায় এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। সবাই অপেক্ষা করছিল ফলাফল দেখার। আশেপাশের কয়েকজন পরীক্ষা দিয়েছিল। তাই তো সবাই অপেক্ষা করছিল কখন ফলাফল প্রকাশিত হবে। সেই সময় তথ্য প্রযুক্তির এতটা উন্নয়ন ছিল না। তখন স্কুলের নোটিশ বোর্ডে রেজাল্ট নিয়ে দেওয়া হতো। আর সবাই ওই নোটিশ বোর্ডে গিয়ে নিজের ফলাফল দেখত। সেই দিনটির কথা এখনো আমার মনে আছে। আমার গ্রামের বাড়ির কিছুটা দূরেই মায়া আপুর বাড়ি। মায়া আপুরা তিন বান্ধবী ছিল। লিপি, মায়া আর সীমা।


সবাই যখন একসাথে স্কুলে যেত তখন আমি অনেকবার তাদেরকে দেখেছি। মায়া আপু পড়াশোনাতে বেশ ভালো ছিল। অন্য দুজনের তুলনায় তার মেধাটাও অনেক ভালো ছিল। আর মায়া আপু বরাবরই ভালো ফলাফল করত। মায়া আপুর রোল ছিল ৩। সবাই অপেক্ষা করছিল কখন বিকেল হবে। বিকেল বেলায় ফলাফল হাতে পাবে সবাই। সেই সময় চারপাশে ভিন্ন রকমের আমেজ খুঁজে পাওয়া যেত। আবার অনেক ভয়ে থাকতো অনেকে। আবার অনেকে প্রতীক্ষা করতো ভালো ফলাফলের। যেহেতু রেজাল্ট দেখতে দেখতে অনেকটা দেরি হয়ে যেত তাই সবাই অপেক্ষা করতো। তেমনি মায়া আপু নিজের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিল। মায়া আপুর বাবা স্কুলে গিয়েছিল তার ফলাফল দেখতে। কিন্তু অনেকটা দেরি হওয়ার পরও মায়া আপুর বাবা সেখান থেকে ফিরে আসছিল না। হঠাৎ করে মায়া আপুর বাবা বাড়িতে ফিরে আসলেন। উনার মুখ দেখে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছিল না। এরপর মায়া আপু ওনাকে কিছু বলতে যাবে তখনই মায়া আপুর বাবা হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন।


মায়া আপু বুঝতে পারছিল না কি হয়েছে। এরপর লিপি আপু আর সিমা আপু মায়া আপুদের বাড়িতে আসে। তখন ওরা জানায় মায়া আপু একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। এই কথা শুনে মায়া আপু ওই যে ঘরের দরজা বন্ধ করেছিল আর দরজা খোলেনি। অনেক ডাকাডাকি করার পরেও মায়া আপু ঘর থেকে বের হয়নি। এবার মায়া আপুর বাবা মায়া আপুকে দরজা খুলতে বলে। তখনও মায়া আপু দরজা খুলে দেয় না। দেখতে দেখতে রাত ভারি হয়ে গেল। কিন্তু তখনও মায়া আপুর ঘরের দরজা বন্ধ। এর মধ্যে অনেকে তাদের বাড়িতে এলো আর গেল। অনেকে তো কটু কথাও শুনিয়ে গেল। পড়াশুনা না করলে অকৃতকার্য হবে এটাই তো স্বাভাবিক। এই কথাগুলো হয়তো মায়া আপুকে খুবই আঘাত করেছিল। মায়া আপু নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেনি।


সারারাত ধরে মায়া আপু কেঁদেছিল। মায়া আপুর কান্নার শব্দে চারপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে গিয়েছিল। আমার এখনো মনে পড়ে সেই দিনটির কথা। মায়া আপুর কষ্ট দেখে খুবই খারাপ লেগেছিল। তখন হয়তো সেভাবে কিছু বুঝতাম না। তবে সেই স্মৃতিগুলো এখনো মনে পড়ে। সারারাত তার অনেক কষ্টে কেটেছে। ঘুমের মাঝেও নাকি কয়েকবার চিৎকার করে উঠেছে। মায়া আপুর আর ঘুম ভাঙ্গেনি। সকাল গড়িয়ে যখন প্রায় দুপুর হয়ে এলো তখন মায়া আপুর মা মায়া আপুকে বারবার ডাকাডাকি করছিল। কোন সারা শব্দ না পেয়ে যখন ভেতরে গিয়ে মায়া আপুর হাত দুটো ধরেছে তখনই বুঝতে পেরেছে মায়া আপু আর এই পৃথিবীতে নেই। ঘরে থাকা কীটনাশক খেয়ে সে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।


সবার সব অভিযোগ অভিমান সবকিছুর অবসান ঘটিয়েছিল মায়া আপু।হয়তো মনে তার অনেক কষ্ট ছিল। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারেনি। ফলাফল খারাপ হওয়া নিয়ে মায়া আপুর নিজেরও অনেক খারাপ লেগেছিল। তার উপর যখন পাড়া-প্রতিবেশী তাকে কথা শুনাচ্ছিল তখন মেয়েটি আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেনি। তখন হয়তো সেভাবে কিছু বুঝতাম না। তবে এখন সেই অনুভূতিটা বুঝতে পারি। একজন মানুষ যখন আহত হয় তখন সেই মানুষটিকে যদি আবারও আঘাত করা যায় তাহলে সে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। আর সেই ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাওয়া মানুষটি বেঁচে থাকার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলে। হয়তো তার চারপাশের মানুষগুলো তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতো। তাকে উৎসাহ দিতে পারতো। কিন্তু তা না করে সবাই তাকে কটু কথা শোনাতে ছাড়েনি। নিজের সম্মান হারিয়ে মেয়েটি নিজেকেই শেষ করে দিয়েছিল। আমাদের সমাজে এরকম অনেক মায়া আপু আছে যারা কাউকে কিছু বলতে পারেনা। কিংবা প্রতিবাদ করতে পারে না। শুধু নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে যায় তার কোন ভুল ছিল না।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 15 days ago 

যখন কেউ অনাকাঙ্খিতভাবে পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করে তখন খুবই খারাপ লাগে। কিন্তু আমাদের সকলের উচিত পরীক্ষার কারো খারাপ রেজাল্ট হলে তাকে উৎসাহ দেওয়া। কারণ সে তার কাছের মানুষগুলো থেকে যখন অনেক কথা শুনে তখন তার খুব কষ্ট হয়। তাকে অনুপ্রেরণা করা উচিত সকলের যাতে সে পরবর্তীতে ভালো রেজাল্ট করতে পারে। খুব সুন্দর একটি বিষয় আলোচনা করেছেন আপু।পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 15 days ago 

ঠিক বলেছেন আপু যারা খারাপ রেজাল্ট করে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া উচিত। আর নতুনভাবে বাঁচার অনুপ্রেরণা যোগানো উচিত। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।

 15 days ago 

সব সময় যে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হবে এটার তো কোনো কথা না। পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করতেই পারে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এর জন্য যে সেই মানুষটাকে আশেপাশের মানুষ কটু কথা শোনাবে এটা তো কোন প্রশ্নই আসে না। আমি তো মনে করি খারাপ রেজাল্ট করলেও তাকে বেশি করে উৎসাহিত করা উচিত, যেন সে পরবর্তীতে ভালো কিছু করতে পারে। আসলে তিনি পারতেন এই পৃথিবীতে ভালোভাবে বাঁচতে। কিন্তু সেই মানুষগুলো তো দিলো না। তাদের এই ব্যবহারের জন্য তিনি নিজের জীবনটা নিজের হাতে শেষ করে দিয়েছেন, কথাটা তো ভাবতেই খারাপ লাগতেছে।

 15 days ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া সব সময় পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হবে এমনটা নয়। আর আশেপাশের মানুষগুলোকে আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত। কাউকে অপমান করার ব্যাপারে ভেবেচিন্তে অপমান করা উচিত।

 15 days ago 

আপনার লেখাগুলো পড়ে শরীরে কাটা দিয়ে উঠল আপু। এই ঘটনাগুলো আসলে এখন অনেক বেশি ঘটছে। যদিও আপনার এই ঘটনাটা আগের। পরীক্ষার একটা ফলাফল কখনোই আমাদের পুরো জীবনটা নির্ধারণ করতে পারেনা। তবে এরকম একটা পরিস্থিতিতে আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোর সাপোর্ট অনেক বেশি প্রয়োজন। তবে এই সময়গুলোতে খুব কম মানুষ রয়েছে যারা আশেপাশের মানুষের সাপোর্ট পায়। আর এর কারণেই সুন্দর জীবন গুলো নষ্ট হয়ে যায়।

 15 days ago 

ঠিক বলেছেন আপু এই ধরনের ঘটনা অনেক ঘটে ।আর এরকম পরিস্থিতির কথা শুনে সত্যিই অনেক খারাপ লাগে।

 15 days ago 

মায়া আপুর ঘটনাটি পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো আপু।এ ধরনের ঘটনাগুলো আসলে আমাদের সমাজে অহরহই ঘটছে।কারো খারাপ অবস্থায় পাড়া প্রতিবেশীদের এমন আচরন সত্যি ই বেদনাদায়ক।আমরা কেন যে সহানুভূতিশীল হতে পারিনা, এটাই অবাক লাগে।

 13 days ago 

আমাদের সমাজের মানুষগুলো ক্ষত স্থানে লবণ ছিটিয়ে দিতে খুব পছন্দ করে। সমাজের মানুষদের এমন নিকৃষ্ট কাজের জন্য, কতো মায়া যে নিজের জীবনটা এভাবে শেষ করে দিয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। একজন স্টুডেন্ট সবসময় ফলাফল ভালো করার পর যদি একবার রেজাল্ট খারাপ হয়ে যায়, তখন তো তার নিজের কাছেই অনেক কষ্ট লাগে। আবার যদি সবাই মিলে কথা শোনায়, তাহলে তো পায়ের নিচে আর মাটি থাকে না। যাইহোক সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 12 days ago 

আসলে এই ঘটনাগুলো প্রতিনিয়তই শোনা যাচ্ছে। আমাদের শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার ফলাফল কখনো আমাদের জীবনে নির্ধারণ করতে পারবে না৷ এটি শুধু আমাদের জীবনের একটি ধাপ মাত্র৷ তবে যারা কোন কারনে পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করে তখন তাদেরকে তাদের পরিবার থেকে যেভাবে চাপ দেয় তখন তারা কিছুই বুঝে উঠতে পারে না৷ আর এই সময় সকলের সাপোর্ট প্রয়োজন যা খুবই কম মানুষ পায়৷ যার ফলে অনেক মানুষের প্রিয় সন্তানরা তাদের কাছ থেকে হারিয়ে যায়৷

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.11
JST 0.031
BTC 67756.28
ETH 3792.28
USDT 1.00
SBD 3.65