বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবি শেঠি’র মহামূল্যবান সাক্ষাতকারsteemCreated with Sketch.

in #heartattack6 years ago

 বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবি শেঠি’র মহামূল্যবান সাক্ষাতকারঃ
 

 ডাঃ দেবি শেঠি ভারতের একজন বিখ্যাত চিকিৎসক। বলা হয়, বিশ্বের সেরা ১০ জন  কার্ডিয়াক সার্জনের একজন তিনি। বাংলাদেশেও তিনি বেশ পরিচিত। ভারতের কর্নাটক  রাজ্যের ব্যাঙ্গালোর থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে ডাঃ শেঠির “নারায়ণা  হৃদয়ালয়” হাসপাতালটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভাল হাসপাতাল।
 

ডাঃ দেবি শেঠির সাক্ষাতকারটি নিয়ম হিসেবে মেনে চললে লক্ষ লক্ষ মানুষ হৃদরোগের ঝুকি থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাহলে এখন দেখুন তিনি কি বলেছেনঃ
 

প্রশ্ন: হৃদরোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয় এমন মানুষেরা কিভাবে হৃদযন্ত্রের যত্ন নিতে পারে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ
১. খাবারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। শর্করা এবং চর্বিজাত খাবার কম খেতে হবে। আর আমিষের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
২. সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন আধা ঘণ্টা করে হাঁটতে হবে। লিফটে চড়া এড়াতে হবে। একটানা বেশি সময় বসে থাকা যাবে না।
৩. ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৫. রক্তচাপ এবং সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
 

প্রশ্নঃ শাক জাতীয় নয়, এমন খাবার (যেমন মাছ) খাওয়া কি হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ না।
 

প্রশ্নঃ মাঝে মাঝে শোনা যায় সুস্থ মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে যা খুবই দুঃখজনক। এ বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ এটাকে বলে নীরব আক্রমণ। এজন্যই ত্রিশোর্ধ্ব সকলের উচিত নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা।
 

প্রশ্নঃ মানুষ কি উত্তরাধিকারসূত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ হ্যাঁ।
 

প্রশ্নঃ হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ পড়ে কেন? এর থেকে উত্তরণের উপায় কি?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। জীবনে সব কিছু নিখুঁত হবে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
 

প্রশ্নঃ জগিং করার চেয়ে কি হাঁটা ভালো? নাকি হৃদযন্ত্রের যত্ন নেয়ার জন্য আরো কঠিন ব্যায়াম জরুরি?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ হ্যাঁ, জগিং করার চেয়ে হাঁটা ভালো। জগিং করলে মানুষ দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় এবং জয়েন্টে ব্যথা হয়।
 

প্রশ্নঃ দরিদ্র এবং অভাবগ্রস্তদের জন্য আপনি অনেক কিছু করেছেন। এসবের পেছনে অনুপ্রেরণা কি ছিল?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ মাদার তেরেসা। তিনি আমার রোগী ছিলেন।
 

প্রশ্নঃ নিম্ন রক্তচাপে যারা ভোগেন, তারা কি হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ সেটা হবে খুবই বিরল।
 

প্রশ্নঃ কোলেস্টেরলের মাত্রা কি অল্প বয়স থেকেই বাড়তে থাকে? নাকি ত্রিশের পর এ বিষয়ে চিন্তিত হওয়া উচিত?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ না, কোলেস্টেরলের মাত্রা ছোটবেলা থেকেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
 

প্রশ্নঃ অনিয়মিত খাদ্যাভাস কিভাবে হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ অনিয়মিত খাদ্যাভাস মানুষকে জাঙ্ক ফুডের দিকে ঠেলে দেয়। আর তখনই হজমের জন্য ব্যবহৃত এনজাইমগুলো দ্বিধায় পড়ে যায়।
 

প্রশ্নঃ ওষুধ ছাড়া কিভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাস, হাঁটাহাঁটি এবং আখরোট খাওয়ার মাধ্যমে।
 

প্রশ্নঃ হৃদযন্ত্রের জন্য সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে খারাপ খাবার কোনটি?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ ফল এবং সবজি সবচেয়ে ভাল খাবার। আর সবচেয়ে খারাপ তৈলাক্ত খাবার।
 

প্রশ্নঃ কোন তেল ভালো? সূর্যমুখী নাকি জলপাই?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ যেকোনো তেলই খারাপ।
 

প্রশ্নঃ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কি নির্দিষ্ট কোনো পরীক্ষা আছে?
 ডাঃ দেবি শেঠিঃ নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সুগার এবং কোলেস্টেরলের  স্বাভাবিক মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। তাছাড়া রক্তচাপ পরিমাপও জরুরি।
 

প্রশ্নঃ হার্ট অ্যাটাক হলে প্রাথমিকভাবে কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে?
 ডাঃ দেবি শেঠিঃ রোগীকে প্রথমে শুইয়ে দিতে হবে। এরপর জিহ্বার নিচে একটি  এ্যাসপিরিন ট্যাবলেট রাখতে হবে। যদি পাওয়া যায় তবে এ্যাসপিরিনের পাশাপাশি  একটি সরবিট্রেট ট্যাবলেটও রাখতে হবে। এরপর দ্রুত হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা  করতে হবে। কেননা প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়।
 

প্রশ্নঃ হৃদরোগজনিত ব্যথা এবং গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার মধ্যে পার্থক্য করা যায় কিভাবে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ ইসিজি ছাড়া এটা সত্যিই খুব কঠিন।
 

প্রশ্নঃ যুবকদের মধ্যে হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যার আধিক্যের কারণ কি?
 ডাঃ দেবি শেঠিঃ একটানা দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ধূমপান এবং জাঙ্ক ফুড। তাছাড়া  ব্যায়াম না করাও একটি প্রধান কারণ। কিছু কিছু দেশের মানুষের জেনেটিক কারণেই  ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকানদের চেয়ে তিন গুণ বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হবার  সম্ভাবনা বেশি থাকে।
 

প্রশ্নঃ রক্তচাপের স্বাভাবিক মাত্রা (১২০/৮০) না থাকলেও কি কেউ পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ হ্যাঁ।
 

প্রশ্নঃ নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে করলে সন্তানের হৃদরোগ হতে পারে- এটা কি সত্য?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ হ্যাঁ। নিকট আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে জন্মগত অস্বাভাবিকতার দিকে ঠেলে দেয়।
 

 প্রশ্নঃ বেশিরভাগ মানুষ অনিয়ন্ত্রিত রুটিন অনুসরণ করে। মাঝে মাঝে মানুষকে  অনেক রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতে হয়। এতে কি হৃদযন্ত্রের ক্ষতি হয়? যদি হয় তবে  এক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ তরুণ বয়সে  প্রকৃতি মানুষকে এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে  সুরক্ষা দেয়। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে এসব বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
 

প্রশ্নঃ অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ওষুধ গ্রহণ করলে অন্য কোন জটিলতা তৈরি হয়?
ডাঃ দেবি শেঠি: হ্যাঁ, বেশিরভাগ ওষুধেরই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু আধুনিক অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ওষুধগুলো অনেক নিরাপদ।
 

প্রশ্নঃ অতিরিক্ত চা বা কফি খেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ না।
 

প্রশ্নঃ অ্যাজমা রোগীদের কি হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ না।
 

প্রশ্নঃ জাঙ্ক ফুডকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ যেকোনো ধরনের ফ্রাইড ফুড যেমন কেন্টাকি, ম্যাকডোনাল্ডস, সমুচা। এমনকি মাসালা দোসাও জাঙ্ক ফুড।
 

প্রশ্নঃ আপনার মতে ভারতীয়দের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা তিন গুণ বেশি। এর কারণ কি?
 ডাঃ দেবি শেঠিঃ পৃথিবীর প্রতিটি জাতিরই কিছু নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত হবার  সম্ভাবনা বেশি থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্য, জাতি হিসেবে ভারতীয়দের সবচেয়ে  ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি।
 

প্রশ্নঃ কলা খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ না।
 

প্রশ্নঃ হার্ট অ্যাটাক হলে কেউ কি নিজে নিজে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারে?
 ডাঃ দেবি শেঠিঃ অবশ্যই। তাকে প্রথমেই শুতে হবে এবং একটি এ্যাসপিরিন  ট্যাবলেট জিহবার নিচে রাখতে হবে। এরপর দ্রুত আশপাশের কাউকে বলতে হবে যেন  তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি মনে করি অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা  করা ঠিক নয়। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অ্যাম্বুলেন্স যথাসময়ে হাজির হয় না।
 

প্রশ্নঃ রক্তে শ্বেতকণিকা এবং হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে কি হৃদরোগ হতে পারে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ না। কিন্তু নিয়মিত ব্যায়াম করার জন্য হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকা জরুরি।
 

 প্রশ্নঃ আমাদের ব্যস্ত জীবনযাত্রার কারণে অনেক সময় ব্যায়াম করা সম্ভব হয়  না। সেক্ষেত্রে ঘরের স্বাভাবিক কাজের সময় হাঁটাহাঁটি করা অথবা সিঁড়ি বেয়ে  ওঠানামা করা কি ব্যায়ামের বিকল্প হতে পারে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ অবশ্যই।  একটানা আধা ঘণ্টার বেশি বসে থাকার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। এমনকি এক চেয়ার  থেকে উঠে অন্য চেয়ারে যেয়ে বসাও শরীরের জন্য অনেকটা সহায়ক।
 

প্রশ্নঃ হৃদরোগ এবং রক্তে সুগারের পরিমাণের সাথে কি কোনো সম্পর্ক আছে?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ বেশ গভীর সম্পর্ক আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক।
 

প্রশ্নঃ হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে?
 ডাঃ দেবি শেঠিঃ পরিমিত খাদ্যাভাস, ব্যায়াম, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া,  কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা। পাশাপাশি রক্তচাপ এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণ  করতে হবে।
 

প্রশ্নঃ যারা রাতের শিফটে কাজ করেন তাদের কি হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ না।
 

প্রশ্নঃ আধুনিক অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ওষুধগু কোনগুলো?
 ডাঃ দেবি শেঠিঃ অনেক ওষুধই আছে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।  তবে আমার পরামর্শ হলো, ওষুধ এড়িয়ে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ  করা। আর সেজন্য নিয়মিত হাঁটা, ওজন কমে এমন খাবার খাওয়া এবং জীবনযাত্রার  প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি।
 

প্রশ্নঃ ডিসপিরিন বা এই ধরনের মাথাব্যথা উপশমকারী ট্যাবলেট কি হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ না।
 

প্রশ্নঃ মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা কেন হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হয়?
ডাঃ দেবি শেঠিঃ প্রকৃতি মেয়েদেরকে ৪৫ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়।
 

প্রশ্নঃ হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার উপায় কি?
 ডাঃ দেবি শেঠিঃ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। জাঙ্ক ফুড ও ধূমপান পরিহার  করতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। আর বয়স ত্রিশ পার হলে নিয়মিত  স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। অন্তত প্রতি ছয় মাসে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা  করতেই হবে।
 

(বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবি শেঠি’র এই পরামর্শ  আশা করি সকলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্ব পাবে। এই কথপোকথন কেমন লাগল জানাবেন ও  অন্যদের হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতন করতে দয়া করে শেয়ার করবেন) 

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 69746.86
ETH 3747.17
USDT 1.00
SBD 3.80