Arrogance Ruins Everything In Life 🔥

in LifeStyle3 years ago (edited)

man-5791933_1280.jpg
Image Source : https://pixabay.com/images/id-5791933/

আসুন এগুলো জেনে নিই :

১) নামাজ শেষ করে উঠে যাওয়ার সময় জানতে পারলাম মেহমান চলে এসেছে। এজন্য মেহমান ঘরে প্রবেশ করা পর্যন্ত জায়নামাজে বসে থাকলাম। সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃত না হলেও অবচেতন মন চাইছে নামায যে পড়তেছি মেহমান দেখুক। এটি রিয়া।
২) কেউ জিজ্ঞেস করলো– আপনি কি করছেন?
উত্তরে বললাম– আমি নামাজ পড়ে উঠে নাস্তা করতেছি বা নামাজ পড়ে উঠে এখন রান্না করতেছি।
এখানে শুধু নাস্তা বা রান্না করার কথা বললেই হতো।
সাথে 'নামাজ পড়ে উঠে' কথাটি জুড়ে দিয়ে অতি সূক্ষ্মভাবে নামাজ কে প্রচারে নিয়ে আসা হলো। এটি রিয়া।
৩) ফজরে যে নামাজ পড়তে উঠলাম কিন্তু কেউ জানলো না। তাই সেটা মানুষকে জানানোর জন্য দিলাম ফেসবুকে একটা পোস্ট। লিখলাম– 'সবাই নামাজ পড়তে উঠুন'।
আমি জানি আমার এই পোস্টে কারোও ঘুম ভাঙবেনা বা কেউ দেখে নামাজে যাবেনা। তাও দিলাম। মোদ্দাকথা নামাজের ব্যাপারটা সবাইকে জানাতেই হবে। এটি রিয়া বা অহংকার।
৪) নফল রোজা রেখে দুপুরে বন্ধুর সাথে চ্যাট করছি। হঠাৎ আউট অফ টপিক তাকে জিজ্ঞেস করেছি– 'ভাত খেয়েছিস কিনা?'। অথচ আজীবন তার ভাতের খবর নেয়নি।
সে হ্যাঁ/না উত্তরের সাথে যে 'তুই খেয়েছিস?'এটা জিজ্ঞেস করবে সেটার গ্যারান্টি সূর্য উঠার মতোই।
সে সুযোগে– না দোস্ত রোজা রেখেছি বলে রোজার প্রচার করে দিলাম। এটি রিয়া।
৫) কোরবানির গরু কিনলাম।
অফলাইনের আশেপাশের সবাই দেখলেও অনলাইন বন্ধুদের সামনে তো আর শো-অফ করা হলো না।
তাই প্রাইভেসি পাবলিক করে দিয়ে দিলাম পোস্ট– আলহামদুলিল্লাহ্‌ 'সম্পন্ন হয়েছে '। এটি রিয়া।
লাইক, লাভের ছড়াছড়িতে বন্যা বয়ে গেছে। অনেকেই দেখি দাম জিজ্ঞেস করলো। সেই সুযোগে জিতা-হারার প্রচারটাও হয়ে গেলো।
৬) বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় মজার ছলেই টেকনিকে বলে দিলাম– তুই বেটা কিপটা। কিছুই দান করিস না।
প্রত্যুত্তরে– তুই কি দান করে উল্টিয়ে ফেলছিস? এই প্রশ্নটা যে করবে, তা জানুয়ারির পর ফেব্রুয়ারি আসার মতোই নিশ্চিত আমি।
সাথে সাথেই দিয়ে দিলাম আমার দানের লিস্ট সম্পূর্ণ ডিটেইলস সহকারে। এটি রিয়া
আমার এই দান পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে প্রচারের জন্য আমার স্ত্রী তো আছেনই।
উপরের প্রত্যেক উদ্দীপক পড়ে কিছু আয়ত্ত করতে পারলেন কি? একেই বলে রিয়া।
এতোক্ষণ যে ইবাদত গুলো করলাম সেগুলা কি আল্লাহর জন্য? নাকি লোক দেখানো? লোক দেখানো মানেই রিয়া।

man-4393964_1280.jpg
Image Source : https://pixabay.com/images/id-4393964/

কখনো ভেবেছেন এসব ইবাদত আদৌও কবুল হবে কি? উপরোক্ত প্রত্যেকটি ইবাদতই হলো রিয়া।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রিয়াকে ছোট শিরক বলেছেন।
তিনি বলেন– 'আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতোটা ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনো ব্যাপারে এতোটা ভীত নই'।
তারা (সাহাবি) বললেন– হে আল্লাহর রাসূল। ছোট শিরক কী?
তিনি বলেন– রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা।
আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন– 'তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখাতে, তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না? [১]
আল-কোরআনেও আল্লাহ্ লোকদেখানো ইবাদত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরশাদ হয়েছে– 'যে ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেনো সৎ কাজ করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকে অংশীদার না করে'। [২]
অন্য আয়াতে যারা লোকদেখানো ইবাদত করে তাদের নিন্দা করে বলা হয়েছে– 'ধ্বংস সেসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে উদাসীন, যারা প্রদর্শন করে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দেয়া থেকে বিরত থাকে'। [৩]
উল্লেখিত আয়াত ও হাদিসের আলোকে ইসলামী জ্ঞানতাপসরা রিয়াকে কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) ও হারাম বলেছেন।
আল্লামা ইবনে কায়্যিম (রাহি.) কবিরা গুনাহের তালিকার প্রথমে রিয়ার আলোচনা করেছেন। ইমাম গাজ্জালি (রাহি.) বলেছেন– 'জেনে রাখো। নিশ্চয়ই প্রদর্শনপ্রিয়তা হারাম। প্রদর্শনকারী আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়। আয়াত, হাদিস ও পূর্ববর্তী আলেমদের বক্তব্য দ্বারা তা প্রমাণিত'। [৪]
বান্দার আমলে রিয়া যদি ইচ্ছাকৃত হয়; তবে তা যতো গৌণই হোক, সে আমল আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে– আল্লাহ্ তায়ালা বলেন 'আমি শরিককারীদের শরিক থেকে অমুখাপেক্ষী। যে ব্যক্তি কোনো আমল করলো এবং তাতে আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করলো, আমি তাকে ও যাকে সে শরিক করল তাকে প্রত্যাখ্যান করি'। [৫]
তবে রিয়া যদি অনিচ্ছায় হয়, বান্দা তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে এবং এ জন্য অনুতপ্ত হয়, তবে গ্রহণযোগ্য মতো হলো, এমন ইবাদত আল্লাহর দরবারে প্রত্যাখ্যাত হবে না। ব্যক্তি রিয়া নামক ছোট শিরক থেকে আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আশা করা যায় ব্যক্তি ইবাদতের দায় থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তবে তার প্রতিদান কী হবে, তা আল্লাহই ভালো জানেন।
আল্লাহ আমাদের রিয়ামুক্ত ইবাদতের তৌফিক দান করুক। আমিন।
ফুটনোট—
[১] (মুসনাদে আহমদ, হাদিসঃ ২২৫২৮)
[২] (সূরা কাহাফ, আয়াতঃ ১১০)
[৩] (সূরা মাউন, আয়াতঃ ৪-৭)
[৪] (ইহয়াউ উলুমিদ্দিনঃ ২/৪৮০)
[৫] (সহীহ্ মুসলিম, হাদিসঃ ৩৫২৮)
Source: Media

Sort:  

like votes your post

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.12
JST 0.032
BTC 66739.81
ETH 3087.19
USDT 1.00
SBD 3.73