বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান : তাজহাট জমিদার বাড়ি ও ফয়েজ লেক

শুভসকাল বন্ধুরা, আজ বুধবার ২০শে চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৩রা এপ্রিল ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ, ২৩ রমজান ১৪৪৫ হিজরি, সবাই কেমন আছেন, আশা করি সকলেই ভালো অবস্থায় আছেন এবং অত্যন্ত সুন্দরভাবে দিন কাটাচ্ছেন। আমার আজকের পোস্টে বাংলাদেশের অন্যতম দুইটি দর্শনীয় স্থান তাজহাট জমিদার বাড়ি ও ফয়েজ লেক সম্পর্কে আলোচনা করব।

তাজহাট জমিদার বাড়ি

Source

রংপুর শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের রংপুর শহরের দক্ষিণ পূর্ব দিকে তাজহাট জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এখানে প্রাচীন ঐতিহ্যের ঘেরা নানা নিদর্শন ও পোড়া মাটির ফলক দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও এখানে রয়েছে তৎকালীন সময়ের যুদ্ধে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র যার মাঝেরাজা জমিদারদের ব্যবহূত তলোয়ার, বল্লমসহ সম্মুখ যুদ্ধে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জামাদি উল্লেখযোগ্য। মান্না লাল রায় পাঞ্জাব থেকে রংপুর এসে সর্বপ্রথম রত্ন খচিত তাজ ও মুকুট তৈরি এবং ক্রয় বিক্রয় শুরু করেন। এ কারণে অঞ্চলের নাম হয় তাজহাট। রাজা কুমার গোপাল রায় মার্বেল পাথর দ্বারা এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। এই জমিদার বাড়ির কেন্দ্রীয় সিঁড়িটির নিচ থেকে উপরের তালা পর্যন্ত বিস্তৃত। ছাড়াও প্রাসাদের মাঝামাঝি একটি বড় গম্বুজ দেখতে পাওয়া যায়।

Source

প্রাসাদের সিড়ির দুই পাশে মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি বিভিন্ন দেবীর মূর্তি দ্বারা সজ্জিত ছিল। সকল দেব-দেবীর মূর্তি বর্তমানে প্রদর্শনের জন্য জমিদার বাড়ির ভিতর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রাসাদের সামনের দিকে রয়েছে একটি বারান্দা। প্রাসাদটি দেখতে অনেকটা ইংরেজি ইউ অক্ষরের মত। প্রাসাদের নিচতলায় দরবার হল উপরে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে। প্রাসাদের সর্বমোট ২২ টি কক্ষে প্রাচীনকালের ভাষায় লিখিত কয়েকটি পান্ডুলিপি রয়েছে। এছাড়াও তৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত পিতল ও কাঁসার বিভিন্ন রকম জিনিসপত্র দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও তৎকালীন রাজাদের বিভিন্ন রকমের ইতিহাস সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

এখানকার নারিকেল গাছ,পুকুর ও বিভিন্ন রকম ফুলের বাগান এই জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যকে বহু গুনে বাড়িয়ে তুলেছে। এই তাজহাট জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। পুরো তাজহাট জমিদার বাড়ি ঘিরে রয়েছে বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ছবি। এই তাজহাট জমিদার বাড়ি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে রয়েছে। এই প্রত্নত্ন বিভাগের অধীনে তাজহাট জমিদার বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্থার কাজ করা হয়ে থাকে।

ফয়েজ লেক

Source

ফয়েজ লেক চট্টগ্রাম শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পাহাড়তলী রেল স্টেশনের খুলশি এলাকায় অবস্থিত। এটি একটি কৃত্রিম লেক যা ৩৩৬ একর জমির উপর অবস্থিত। ফয়েজ লেকের পূর্ব নাম ছিল পাহাড়তলী লেক। পরবর্তী সময়ে এই নাম পরিবর্তন করে এক ইংরেজ রেল প্রকৌশলীর নাম অনুসারে নাম রাখা হয় ফয়েজ লেক। সেই সময়ের কলোনির মানুষদের কাছে সহজে পানি পৌঁছে দেওয়ার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল। এটি দুইটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল। পাহাড়ের উপরের দিক থেকে বয়ে আসা প্রাণীর প্রবাহের দিক পরিবর্তন করে এই লেকটি তৈরি করা হয়। লেকের মনোরম পরিবেশ এবং এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য প্রতিবছর বহু পর্যটক এখানে ঘুরতে আসে।

Source

ফয়েজ লেক এর আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মনোরম সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। এখানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড এর ব্যবস্থা রয়েছে। বড়দের জন্যও রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা। এ লেকের আশেপাশে রয়েছে অনেকগুলো পাহাড় যার সৌন্দর্য বর্ণনাতিত। এ সকল পাহাড়ের মাঝখানে বিভিন্ন রকমের হৃদ দেখতে পাওয়া যায়। এ সকল হৃদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে অরুণাময়ীয, দক্ষিণী, আকাশমনি, মন্দাকিনী, অলকানন্দা নামের হৃদ।হৃদের পাড়ে রয়েছে ছোট-বড় অনেক নৌকা। এ সকল নৌকায় করে রোদের ভেতর ঘুরে বেড়ানো যায় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এই লেকের সৌন্দর্য মুহূর্তেই আপনার মনকে ভালো করে দিবে। পিছনে আরও রয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান নৌকা। এই ঐতিহ্যবাহী সাম্পান নৌকায় করে সম্পূর্ণ লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা রয়েছে।

Source

ফয়েজ লেক এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আপনি দেখতে পাবেন বিভিন্ন রকমের চেনা অচেনা পাখি। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য একটি মিনি চিড়িয়াখানাও তৈরি করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া আরো মজার মজার বিভিন্ন উপভোগ্য বিষয় রয়েছে এই ফয়েজ লেকে। ফয়েজ লেকের থিম পার্টি একটি বিশ্বমানের থিম পার্ক হিসেবে পরিচিত।

---

এই পোস্টের কিছু কিছু তথ্য নিচের সোর্স থেকে নেওয়া হয়েছে

Source 1	Link
Source 2	Link