আরো স্বপ্ন, আরো প্রাণ, আরো আশা || { জীবনের গল্প থেকে }steemCreated with Sketch.

in আমার বাংলা ব্লগ16 days ago

সবাইকে আমার বাংলা ব্লগে স্বাগতম ও শুভেচ্ছা জানাই।

আসসালামু আলাইকুম / আদাব।

বেশ কিছুদিন পর আবার লিখতে বসলাম প্রিয় বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে। আপনারা সবাই কেমন আছেন ?
আশা করি ভালোই আছেন। বেশ কিছুদিন যাবত যে গরম পড়ছিলো তা কমে আসতে শুরু করেছে, বাংলার সামগ্রিক জনজীবনের জন্য যা অনেকক্ষেত্রেই স্বস্তির একটি বিষয়। অন্তত দীর্ঘ একটি সময়ের পর যখন মানুষ একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারে - সেটাই একটা বড় প্রাপ্তি।

আজ আমি নিজের একটি ব্যাক্তিগত উপলব্ধি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। মাঝে মাঝে অফ টপিকে জেনারেল রাইটিং লিখতে শুরু করি, যদিও গল্প, কবিতা আর অন্যান্য ব্লগ পোস্টের ভীড়ে এরকম লেখা তেমন একটা দেখা যায় না। তারপরো চেষ্টা থাকবে আজকে ও সামনের দিনগুলোতে কিছু নতুনত্ব নিয়ে আসার, তার সাথে সেসব বিষয় ও ভাব যা মানুষের মনের একেবারে ভেতরকার ইচ্ছা আকাঙ্খা তুলে ধরবে।

আশা করি আপনারা লেখাটি ধৈর্য্য ধরে পড়বেন, নিজের মতামত শেয়ার করার সাথে সাপোর্ট করবেন যাতে ভবিষ্যতে লেখার পরিসর আরো বাড়াতে পারি এবং লেখক হিসেবে পথচলা যেন দীর্ঘায়িত হয়। স্টিমিটের জগতে তার চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার নেই, শুধু পাঠক আর বন্ধুূদের ভালোবাসা পেলেই সার্থক হবে ব্লগিং ক্যারিয়ার।

মানুষ স্বভাবতই আশ্রয় খোঁজে বিপদ থেকে উদ্ধার হতে, নিজেকে আরেকটু প্রকাশ করতে আর যতটুকু জীবন বিষাদের তার থেকে পরিত্রাণ পেতে। যখন জীবনে অনেক কিছু হারাতে থাকে, তার থেকে নতুন কিছু পাওয়ার গন্ডি ছোট হয়ে যায়। যদিও হারানো কিংবা প্রাপ্তির এই খেলা সাময়িক, তবুও যতটুকু সময় ধরে তার লেনাদেনা চলে তা-ই বা কম অনুভবের কি করে হয় ?

pexels-photo-906023.jpegSrc

চারপাশের অনেক মানুষজন আছে যারা শত দুঃখের মাঝেও আনন্দের ফোয়ারা একেবারে থেমে যেতে দেয় নি। তা দুঃখ যতই ঘিরে ধরুক বটবৃক্ষের মতো। কখনো পথ চলতে চলতে অনুভব হয়, জীবনের অনেকগুলো বছর টানা ভালো কোন সুখবর আসে নি, ভাগ্য ভুলেও ফিরে তাকিয়ে জীবনকে আরেকটু সুখকর করার সুযোগ এনে দেয় নি।

যখন দেখা যায় সমাজে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় নিজের ব্যাক্তিগত জীবনকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তার ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষেরই নিজস্ব ভাবনা চিন্তা থাকে। সবার জীবনের চড়াই উতরাই আর সুখ দুঃখ একরকম হয় না, কারো ক্ষেত্রে অনেকগুলো প্রতিকূলতা পার হয়ে এসে একটি কিনারে এসে পৌঁছে। আমরা তার অনেক কিছু জানি, আবার বেশিরভাগই ঢাকা পড়ে আছে দৃষ্টির বাইরে।

আজ এমন একজনের কথা বলবো, যার জীবনের মূল সম্বল ছিল নিজের জেদ আর কঠিন মনোবল। ঠিক ছোটবেলায় একটি ঝড়ে পরিবার পরিজন থেকে আলাদা হয়ে সে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। কখনো পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছে আবার এখানে ওখানে এক দুবেলা খাবারের খোঁজ করেছে। চারপাশে আপনজন কেউ ছিল না, তাই জীবন কত নিঠুর পাষাণ হতে পারে তার উপলব্ধি সেই বাল্যকাল কৈশোরের সময় থেকেই সে বুঝে এসেছে।

কখনো প্রথম দিকে ছেলেটার বেঁচে থাকার সংগ্রাম খুবই কষ্টের ছিল, ঠিকমতো দুবেলা খাবার জুটতো না আর তার সাথে নানা প্রতিকূলতা তো প্রাপ্য ছিলই। মায়া মমতার লেশমাত্র না পাওয়া ছেলেগুলো বেড়ে ওঠে অনাদরে। যাদের বেশিরভাগই উচ্ছন্নে চলে যায়, জীবন থেকে কিছু পাওয়ার খেই হারিয়ে ফেলে। তবে কেউ কেউ স্বপ্ন দেখা শুরু করে, শত প্রতিকূলতার মাঝেও।

বড় হওয়ার ইচ্ছা যখন কাউকে ঘিরে ধরে, তখন সমাজের যেকোন অবস্থান থেকে উত্তরনের উপায় খোঁজ করার একটি পরিকল্পনা চিন্তাভাবনায় গড়ে ওঠে। ছেলেটির ক্ষেত্রেও তাই প্রবোলভাবে কাজ করেছে, যখন সে চারপাশের পরিবেশ দেখে দেখে বড় হতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝে কখনে ঝড় বৃষ্টি শুরু হতো, কখনো খরা যা তার বেঁচে থাকার পথের অন্তরায় ছিল।

pexels-photo-846980.jpegSrc

ছিন্নমূল জীবনের ভাবনার পরিসর এভাবেই এক পা দু পা করে বেড়ে উঠতো, কখনো রাস্তার পাশের চা দোকানে কাজ করে জীবিকা অর্জন, পত্রিকার সাইকেল ফেরি করে রোজগার করার ফাঁকে ফাঁকে সে বাইরের পরিবেশ সম্পর্কে বুঝতে পারতো। বাকি ছেলেমেয়েরা একটি সুন্দর বাড়িঘর, পরিবারের সাজানো সংসারের মাঝে থেকে কিভাবে হেসেখেলে জীবন পার করছে, আর তার অবস্থা কেমন। যখনই তুলনা করতে গিয়েছে - তার মনপ্রাণ বিষিয়ে বেদনাতুর করেছে।

সবচেয়ে বড় যেটা তাকে উদ্যমী হতে শিখিয়েছে, তা হলো কখনো অবহেলার শিকার হয়ে আর নিজের ছোটবড় উন্নতি, যতটুকু উন্মুক্ত স্কুল থেকে শিখতে পেরেছে, তার প্রতি বিশ্বাস রেখে। কখনো যে দোকানে সে কাজ করতো তার মালিক তাকে লেখাপড়ার সরঞ্জাম কিনে দিত, অনাথ ছেলেটার মা-বাবা নেই, যতটুকু মায়া ঘিরে ধরতো - তাই তাকে আবার দুঃখভরা জীবনে আশার সঞ্চার করে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতো।

অবহেলা ছিল তার নিত্যদিনের সঙ্গী, যা তাকে কখনো হাসাতো, কখনো কাঁদাতো। তবুও তার জীবনে বিষন্নতার ছায়া পড়তে দেয় নি। যখম পৃথিবীর কেউ তাকে ভালোবাসে না, কাছের মানুষ পনজন কেউ নেই অভাগার জীবনে, তখন ভালোবাসা আশা করে সে বসে থাকে নি। তুচ্ছতার একটি ভারী পাল্লা আছে, যখন তা সহজ জীবনকে জটিল করে তোলে, তখন জীবনে আকাঙক্ষা কমে যায়।

pexels-photo-736509.jpeg
Src

ছেলেটি এখন অল্পতেই তুষ্ট। প্রতিদিনের হিসেব মিলিয়ে নিয়ে সে অনেকগুলো বছর পার করে দিয়েছি। কিছু টাকা জমিয়ে আর্থিক সচ্ছলতা নিয়ে এসেছে। চারপাশের পরিবেশ এখন তার ভালো লাগে। স্বপ্নসৌধ নির্মাণের অপেক্ষায় থেকে এখন সে বড় হতে চায়, ভালো চাকরি -বাকরি আর ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, সমাজের একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে চায়।

এক পশলা বৃষ্টির আগের হাওয়ায় সে খুঁজে পায় সেই পুরনো দিনে, যেদিন প্রথম সে ভাগ্যান্বেষে এ দোকানটিতে এসেছিল। দশটি বছর পার হয়ে গিয়ে এখন সে দেখতে পায়, অনুভব করে সেই মুহূর্ত যখন তার আশা দিগন্ত ছুঁয়েছিল, এক পা দু পা করে এখন অনেকদূরে চলে এসেছে। আরো দূরের পথ ডাকছে তবুও....

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.13
JST 0.031
BTC 61745.50
ETH 2898.66
USDT 1.00
SBD 3.61