কয়েন গিলে (Foreign Body ingestion) ফেলা এক তরুণীর গল্প !

in আমার বাংলা ব্লগ15 days ago
হ্যালো! কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই ভাল আছেন। "চেম্বার কথন" সিরিজের ৬ নং পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম। এখানে আমি আমার চেম্বারে পরামর্শ দেয়া কোন একটা রুগীর রোগ সম্পর্কিত একটা ছোট গল্প বলি। গল্পের শেষে এর আলোকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো পয়েন্ট আকারে উল্ল্যেখ করি। চলুন শুরু করা যাক।

steem.jpg


কয়েন গিলে (Foreign Body ingestion) ফেলা এক তরুণীর গল্প !

মা ও মেয়ের আগমন আমার চেম্বারে। মাকে যতটা চিন্তিত লাগছে, মেয়ের মধ্যে তার ছিটেফোটাও নাই। বরং মুখে একটা লাজুক হাসি হাসি ভাব। বয়স ১৩ বছর। কি সমস্যা? ৪-৫ দিন আগে মেয়ে একটা কয়েন গিলে ফেলেছে! গেলার সময় কোন সমস্যাই হয় নাই। এমনকি গেলার পরও ৪-৫ দিনে কোন সমস্যা হয় নাই। যখন আমার চেম্বারে বসে আছে, তখনও কোন সমস্যা নাই।

কিন্তু হারনো কয়েনটা আসলেই খেয়েছে কিনা? খেয়ে থাকলে সেটা তখনোও খাদ্যনালীতেই আছে নাকি বের হয়ে গেছে অলরেডি? বের না হলে কি করনীয়? ইত্যাদি টেনশানের প্রেক্ষিতে মা মেয়েকে নিয়ে প্রথমে গিয়েছেন সরকারী হাসপাতালে। যেহেতু শারিরীক কোন সমস্যা হচ্ছিল না, ওখানকার ডাক্তার অপেক্ষার করতে বলেছেন আরো কিছু দিন অটোমেটিকেলি বের হয়ে যেতে পারে এটা চিন্তা করে। কিন্তু মায়ের মন মানে নি। তাই আগমন প্রাইভেট ক্লিনিকে।

আমার কাছে আসার উদ্দেশ্যে ছিল একটাই। কয়েনের অবস্থান জানা। আছে নাকি বের হয়ে গেছে? এধরণের মেটালিক ফরেনবডির জন্যে পেটের এক্সরে হচ্ছে আদর্শ একটা টেস্ট। সেটাই করতে দিলাম। নিচের এক্সরেটা দেখুন [এটা ঐ তরুণীর পেটের এক্সরে]। কয়েনটা খুজে পাচ্ছেন কি?

coin-FB.JPEG

ছবির নিচের দিকে সাদা যে জিনিসটা দেখা যাচ্ছে ওটাই কয়েন। লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এটা বৃহদান্ত্রের শেষের দিকে অবস্থান করছে, পায়ুপথের কাছাকাছি।

রুগীনির মাকে দেখালাম। এটার আর বিশেষ কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা লাগল না। কয়েন বহাল তবিয়তেই আছে, তখনোও বের হয় নাই।

পেট ঝেড়ে যেন পায়খানা হয়ে যায় সে জন্যে একটা সিরাপ লিখে দিলাম। তারা বিদায় নিল। বের হয়েছিল কিনা বা কতদিন পরে বের হয়েছিল তা আর জানা হয়ে ওঠে নাই!

অবুঝ বাচ্চারা অনেক সময় হাতের নাগালে যা পায় তাই মুখে চালান করে দেয়। কিন্তু ১৩ বছরের একজন শারিরীক এবং মানসিকে ভাবে সুস্থ্য সবল তরুণী কিভাবে কয়েন গিলে ফেলল সেটা একটা অবাক করা বিষয়ই বলতে হবে।



এই গল্পের আলোচ্য রোগ কয়েন বা কোন কিছু গিলে ফেলা (Foregin body in the GI tract) সম্পর্কিত কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্যঃ

  • খাদ্যনালীতে ফরেন বডি- এরকম রুগীদের মোটামুটি ৩ টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারেঃ ১। শিশু (Children) ২। মানসিক রুগী ও জেল বন্দী (Psychiatric patients & prisoners) ৩। শারিরীক ভাবে কোন বিকলঙ্গতা যাদের খাবারে প্রবেশদ্বারের নিয়ন্ত্রণ থাকে না (Edentulous patients).
  • কি ধরণের ফরেন বডি খাদ্যনালীতে পাওয়া যায় বা যেতে পারে তা বয়স, কিংবা মানসিক অবস্থার‍ উপর নির্ভর করে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত পাওয়া যায় কয়েন, বোতাম, খেলনার মধ্যকার ছোট চম্বুক, মার্বেল ইত্যাদি।
  • বড়দের ক্ষেত্রে কমন ফরেন বডি হচ্ছে আলগা দাঁত, দাঁত খুচানো টুতপিক (Toothpick), মুরগীর হাড়, মাছের বড় কাটা ইত্যাদি।
  • জেলবন্দীরাও অনেক সময় অনেক জিনিস গিলে ফেলে ধরা পড়ার ভয়ে। এমনকি রেজর ব্লেড পর্যন্তও গিলে ফেলে। কিন্তু গেলার আগে অনেকেই টেপ পেঁচিয়ে নেয় যেন কেটে না যায়!
  • ড্রাগ স্মাগলাররা কোকেইন বা হিরোইন পেটে করে পাঁচার করে। ডাবল কনডম দিয়ে পেচিয়ে এগুলোকে পেটে চালান দেয়!
  • মানসিক রুগীরা সবচেয়ে বেশী আজব আজব জিনিস পেটে চালান দেয়!
  • খাদ্যনালীতে ফরেন বডি জনিত কারণে বছরে প্রায় ১৫০০ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
  • খাদ্যনালী ফুটো হয়ে যাওয়া, ইনফেকশান হওয়া, খাদ্যনালী পচে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন জটিলতা দেখা যায় এ ধরণের ক্ষেত্রে!
  • এক্সরে কিংবা সিটি স্ক্যান হচ্ছে ফরেন বডি ডিটেকশানের জন্যে আদর্শ পরীক্ষা। জটিলতা না হলে রক্ত পরীক্ষার কোন প্রয়োজনীয়তা পড়ে না।
  • চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে "কি খেয়েছে" এবং "রুগীর অবস্থার" উপর। খারাপ রুগী হলে এন্ডোসকপি করে দ্রুত ফরেন বডির বের করতে হবে। ব্যাটারী খেলেও দ্রুততার সাথে বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। সুচালো কিছু খেয়ে ফেললে সেটাও দ্রুতই বের করার ব্যবস্থা করতে হবে।

ওকে। আজকে এ পর্যন্তই। আশা করি কিছু নতুন তথ্য পেয়েছেন আমার পোস্ট থেকে। কোন পরামর্শ বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন। ভাল থাকুন।

আল্লাহ হাফেজ

ডা. হাফিজ
ওমান



চেম্বার কথন সিরিজের পূর্ববর্তী পোস্টঃ

এন্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশানের রিয়াকশানে (Anaphylaxis) প্রায় হারাতে বসা এক রুগীর গল্প!

বুকে বাতাস জমা (Pneumothorax) এক রুগীর গল্প!

একজন হাউজমেইডের (Housemaid) গল্প যিনি তার চাকরি হারানোর দ্বারপ্রান্তে

ফরনিয়ার গ্যাংগ্রীনে আক্রান্ত এক রুগীর গল্প

পেশাব এবং তলপেটের ব্যথা নিয়ে আসা এক রুগীর গল্প



আমি ডা. হাফিজ। ঢাকার একটা মেডিকেল থেকে ডাক্তারী পাশ করেছি। ২০১৪ সাল থেকেই দেশের বাইরে আছি। শুরুতে ২ দুই বছর ছিলাম মালদ্বীপে। তারপর থেকে ওমানে আছি গত ৭ বছর ধরে। এখানে একটা পলিক্লিনিক এ জি.পি. ডাক্তার হিসাবে কর্মরত আছি বর্তমানে।
My Discord ID: hafiz34#3722

Posted using SteemPro

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 67066.21
ETH 3093.89
USDT 1.00
SBD 3.75