মায়ের কান্না || শেষ পর্ব
"হ্যালো",
ছেলেটা কলেজে পড়ছে, মেয়েটা স্কুলে পড়ে। সাহেরা বেগমের জীবনে সুখ ফিরে এসেছিল। এবার সাহেরা বেগম মনে মনে ভাবছিল বড় ছেলেকে বিয়ে করাবে। মেয়েও দেখাশোনা করছিল। এরমধ্যে একটা ভালো মেয়ে দেখে সাহেরা বেগম তার বড় ছেলের বউ করে আনে। ছেলেকে বিয়ে করানোই যেনো কাল হয়ে দাঁড়ায় সাহেরা বেগমের।
(চলবে)
দিন দিন বড় ছেলের আচরণ বদলাতে থাকে। বড় বউমা কিছুতেই সাহেরা বেগমকে সহ্য করতে পারে না।উঠতে বসতে বকাবকি করে।ভালোমন্দ খেতে দেয়না।ছেলেকে বললে ছেলেও কোনো প্রতিবাদ করে না।হঠাৎ একদিন বড় ছেলে জানিয়ে দেয় সে বউকে নিয়ে আলাদা খাবে।এ কথা শুনে তো সাহেরা বেগম কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। কি আর করার।ছোট মেয়েটা এখন কলেজে পড়ছে।ছোট ছেলে পড়াশোনা শেষ করে একটা ছোটখাটো কোম্পানি তে চাকরি করে।ছোট ছেলেটাও একদিন কাউকে না জানিয়ে তার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে আসে।
সাহেরা বেগম ভেবেছিলো হয়তো ছোট বউমা তাকে দেখাশোনা করবে।কিন্তু ওই যে কথায় আছে না কষ্টে যার জীবন শুরু কষ্টে শেষ হয়।সুখ নামের পাখিটা যে তার কপালে নেই।কিছুদিন পর ছোট ছেলেও আলাদা হয় বউকে নিয়ে। এরপর সাহেরা বেগম তার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকে।সাহেরা বেগম হাজার কষ্ট পেলেও নিজের সম্বল কখনো হাতছাড়া করেনি।তার পাঁচটি গরু ছিল। গরু থেকে যে দুধ পেত তা বিক্রি করে তার সংসার চলত। এছাড়া এলাকার চেয়ারম্যান ভালো হওয়ায় তার বয়স্ক ভাতাও হয়েছিল। এদিকে তার ছেলেরা কখনোই জানার চেষ্টাও করত না তাদের মা কি খাচ্ছে কি পড়ছে তাদের বোনটার কি অবস্থা।
একই বাড়িতেই তারা থাকতো তারপরও কখনো মাকে এক বেলা খাওয়ার কথা বলত না। এদিকে মেয়েটাও বড় হয়ে গেছে।সাহেরা বেগম দুটো গরু বিক্রি করে দেখেশুনে মেয়ের বিয়ে দেয়।মেয়ের বিয়ের পর সাহেরা বেগমের কষ্ট অনেকটা দূর হয়ে গিয়েছিল। কারণ মেয়ের জামাই এতই ভালো ছিল যে কখনো নিজের মা এবং শাশুড়ি মায়ের মধ্যে পার্থক্য করত না। জামাইয়ের এতো ভালোবাসা পেয়ে সাহেরা বেগম তার ছেলেদের দেওয়া কষ্ট মুহূর্তেই ভুলে গিয়েছিল।
আর এভাবেই বাকিটা জীবন চলছে সাহেরা বেগমের। যে ছেলেদের জন্য সাহেরা বেগম এত কষ্ট করলো জীবনে এত সংগ্রাম করলো আজ তারাই মাকে ভুলে গেল। আসলে দিনশেষে সবাই বেইমান।আমি বৌমাদের সে ক্ষেত্রে দোষ দেব না কারণ ছেলে যদি ভালো হয় তাহলে বৌমা অবশ্যই ভালো হতে বাধ্য। তারা মায়ের সঙ্গে এটা মোটেই ঠিক করিনি।তাদের উচিত ছিল শেষ বয়সে মাকে ভরসা দেওয়া সুখে রাখা। যেটা পরের বাড়ির ছেলে করছে। যাইহোক যে যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। সাহেরা বেগম এখন বর্তমানে ভালো আছে এটাই অনেক। হয়তো বাকিটা জীবন এভাবেই কেটে যাবে তার।
পরিশেষে একটাই কথাই বলবো আমাদের উচিত বাবা মাকে ভালো রাখা সেই সাথে শাশুড়ি শশুরকেও সমান সম্মান দেওয়া। আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে পরবর্তীতে নতুন কোনো বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ থাকবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
❤️আমার পরিচয়❤️
আমি হাবিবা সুলতানা হীরা । জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশাঃ গৃহিণী। শখঃ নতুন নতুন রেসিপি বানাতে ভালো লাগে। তাছাড়া গান গাওয়া, আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা ও বাগান করতে আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি স্টিমিটে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে যুক্ত হই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এসব ক্ষেত্রে কখনোই ছেলের বউদের একার দোষ থাকে না। ছেলেদের দোষ বউদের থেকে আরও বেশি। বউরা অন্যের ঘরের মেয়ে কিন্তু ছেলেরা তো তাদের মাকে ঠিকই দেখতে পারতো। যাইহোক সাহেরা বেগমের ছেলেদের দুঃখ মেয়ের জামাই দিয়ে পূরণ করতে পেরেছে জেনে ভালো লাগলো। তা না হলে সারা জীবন কষ্টই করে যেতে হতো তাকে। আর এসব ছেলেদেরকে ধিক্কার জানানো ছাড়া কি করা যায়।
আমিও সেটাই মনে করি আপু ছেলের বউদের দোষ মোটেই না কারণ ছেলেরা ঠিক থাকলেই সব ঠিক থাকবে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি মন্তব্যের জন্য।
সাহেরা বেগমের কষ্টের কথা গুলো পড়ে খুব খারাপ লাগলো।সাহেরা বেগমের বড় ছেলে ও ছেলের বউ দেখতেন না আশায় ছিলেন ছোট বৌ দেখতে কিন্তুু বিধি বাম সেখানেও তার স্থান হলো না।মেয়েকে নিয়ে আলাদা খেতেন।তবে মেয়ের বিয়ের পর তিনি একটু সুখের মুখ দেখতে লাগলেন এবং ভালো আছেন জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
এরকম ঘটনাগুলো আমাদের আশেপাশে এখন প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। আপনার সুন্দর মন্তব্যটি পেয়ে ভালো লাগলো আপু।