জেনারেল রাইটিং-গরমের উত্তাপ ও দিনমজুরের কথা||

in আমার বাংলা ব্লগlast month

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে অনেক ভালো লাগে। তবে সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে লিখতে বেশি ভালো লাগে। তাই তো আজকে আমি গরমের উত্তাপ ও দিনমজুরের কথা টপিক নিয়ে কিছু কথা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি। আশা করছি সবার ভালো লাগবে।


গরমের উত্তাপ ও দিনমজুরের কথা:

IMG_20240426_121411.jpg


সময়টা বড্ড কঠিন যাচ্ছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তাপমাত্রা যেন বেড়েই চলেছে। প্রকৃতির এই ভয়ঙ্কর রূপ দেখে আমরা সবাই হতাশ হয়ে যাচ্ছি। হয়তো যে যার মত করে ভালো থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু সময়টা যে সত্যিই অনেক কঠিন। আমরা ঘরে বসে আরাম আয়েস করে সময় কাটালেও আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের দুবেলা খেতে হলেও ছুটে চলে যেতে হয় দূর দূরান্তে কাজের জন্য। যারা নিজের পরিশ্রমের অর্থ দিয়ে দুবেলা ডাল ভাতের ব্যবস্থা করে তাদের কে আমাদের সমাজ নাম দিয়েছে দিনমজুর। আমরা তাদেরকে হয়তো নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করি। কিন্তু সেই সব মানুষরাই হলো আসল হিরো। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিবারের মুখে হাসি ফোটায়। যারা উপার্জন করে দুবেলা দুমুঠো ডাল ভাত খেয়েই সন্তুষ্ট থাকে তাদের হয়তো খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। শুধু একটু ভালো থাকতে চায় তারা।


গরমের উত্তাপ যেন পুরো বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বড় বড় দালানকোঠায় এসির শীতল বাতাসে কেউবা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছে আবার কেউবা এই গরমে ঠেলাগাড়ি নিয়ে মাল ভর্তি করতে করতে ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে। হয়তো কয়টা টাকার বিনিময়ে তাদেরকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। কারণ তারা যে দিনমজুর। তাদের কষ্টের ফল তারা সেভাবে হয়তো পায় না। দিনশেষে কয়টা টাকা মজুরি পেয়ে ছুটে চলে যায় কাজ করতে। এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে তাদের হয়তো খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। দুমুঠো ডাল ভাত খেয়েও যেন তাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। পরিবারের মানুষগুলোকে দুবেলা খাওয়াতে পারলে যেন তাদের আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর মাঝেই যেন তাদের ভালো থাকা। এই গরমে জনজীবন যেখানে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সেখানে একজন দিনমজুর যখন ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে তখন কেউ পাশে গিয়ে দাঁড়ায় না। কিংবা কেউ বলে না আজকে না হয় দশটি টাকা বেশি দিয়ে দেই। কারো ঘামে ভেজা শরীরের মূল্য আমরা দিতে জানি না। যেই মানুষটি কয়টা টাকার বিনিময়ে আমাদের জন্য কাজ করে তাদের জন্য আমরা কখনো ভাবি না।


নিজেরা এই গরমের জন্য কত রকমের শরবতকে তৃষ্ণা মিটাই কিন্তু আমাদের জন্য যারা কাজ করে তাদের কখনো এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিয়ে বলি না একটু না হয় বিশ্রাম নিন। উঁচু দালান কোঠায় বড় বড় লোকেরা বসবাস করলেও তারা তাদের প্রয়োজনে দিনমজুরদের কে কাজে লাগায়। আর সেই মানুষগুলোর মূল্য তারা দিতে জানে না। যখন কাজ করতে করতে কেউ হাঁপিয়ে উঠে তখন সামনে এসে দাঁড়িয়ে কেউ বলে না একটু বিশ্রাম করে নিন। কাজ করতে করতে ক্লান্ত শরীর যখন ঝিমিয়ে যায় তখন হয়তো কারো কড়া কথায় ঝিমানি দূর হয়ে যায়। এই কথা শুনে হয়তো সেই দিনমজুরের হৃদয়ের মাঝে ক্ষত সৃষ্টি হয়। তার কষ্টটা কেউ উপলব্ধি পারতে পারে না। শুধুমাত্র টাকাটাই বোঝে। সেই মানুষটারও যে এই গরমে কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে সেটা অনেকে বুঝতে চায় না। তার ভেজা শার্টের ঘামের গন্ধে অনেকে হয়তো নাক ছিটকায়। এর জন্য তাকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে কিংবা কষ্ট করতে হয়েছে এটা কেউ কখনো উপলব্ধি করে না। দিন শেষে ক্লান্ত শরীরে যখন সেই মানুষটি ঘরে ফিরে তখন তার আপন মানুষগুলো তার ভেজা শার্টের ঘামের গন্ধ অনুভব করতে পারে। হয়তো আড়ালে গিয়ে চোখের জল ফেলে। আর সেই দিনমজুর নিজের পরিবারকে ভালো রাখার জন্য এই গরমেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে যায়। কারণ তাদের যে এভাবেই বাঁচতে হবে।


তাদের গায়ের ঘাম কেউ দেখেনা। তাদের কষ্ট কেউ অনুভব করে না। কারণ তারা যে এই সমাজের চোখে দিনমজুর। টাকার বিনিময়ে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কারো কাছে ভালো কিছু প্রত্যাশা করে না তারা। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর যখন কয়টা টাকা হাতে পায় তখন তার মুখে যেন বিজয়ের হাসি ফুটে ওঠে। যে হাসির মূল্য লাখ টাকার থেকেও বেশি। আমরা যদি আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সেই সব মানুষগুলোকে একটুখানি সাহায্য করতে পারতাম তাহলে হয়তো তারাও মানসিক দিক থেকে ভালো থাকতো। তাদেরকে ভালো রাখার দায়িত্ব হয়তো আমাদের সবার। কারণ দিন শেষে তারা আমাদের জন্যই কাজ করে। তবে সবশেষে একটি কথাই বলতে চাই আমাদের সবাইকে মনে রাখা উচিত তারাও আমাদের মত রক্তে মাংসা গড়া মানুষ। তাদেরও গরমে কাজ করতে অসুবিধা হয় কিংবা কষ্ট হয় হয়তো বেঁচে থাকার তাগিদে কিংবা খাবার যোগাড় করতেই তাদের ছুটে চলে যেতে হয় কাজের সন্ধানে। হয়তো দিনশেষে তার পরিবারের মানুষগুলো পথ চেয়ে বসে থাকে কখন সেই মানুষটি ফিরবে। হয়তো ডাল ভাতের জোগাড় করতে পারলেই তারা অনেক খুশি। এই মানুষগুলোর খুব একটা প্রত্যাশা নেই। তবুও আমরা যদি নিজেদের জায়গা থেকে তাদেরকে একটু ভালো রাখি তাহলে তারাও মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারবে।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230828_190629.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last month 

এই উত্তপ্ত গরমের মধ্যে ও বসে নেই কোন খেটে খাওয়া মানুষ।তারা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ছুটে চলে গিয়েছি মাঠে ঘাটে।তারা শত কষ্টের রোদের তাপমাত্রা সহ্য করে মাঠের মধ্যে কাজ করছে।মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তারা জীবিকা নির্বাহ করছে। আমরা যারা ইট পাথরের নগরের মধ্যে বসবাস করি, তারা হয়তো খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট সম্পর্কে তেমন একটা জানি না।

 last month 

সমসাময়িক আবহাওয়ার পরিস্থিতি নিয়ে চমৎকার একটি পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে বর্তমান সময়ে প্রচণ্ড গরম এবং সূর্যের প্রখর তাপের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ খরার আবির্ভাব ঘটেছে। আর এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব থেকে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে আমাদের দেশের দিনমজুর শ্রেণীর মানুষেরা। কিন্তু এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে আমরা সকলে কবে যে মুক্ত হবো সেটা হয়তো আমাদের জানা নেই। কিন্তু আমরা আশা করি হয়তো খুব দ্রুত আমরা স্বস্তির দিন ফিরে পাবো এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সক্ষম হবো।

 last month 

সময়োপযোগী একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন আপনি। পোস্টটি পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। প্রচন্ড গরমে ও দিনমজুররা বসে নেই তারা খেটেই চলছে। তাদের জীবিকার তাগিদে। তারা মাথার ঘাম পায়ে পেলে অনেক কঠোর পরিশ্রম করে ফসল ফলায়। আর যারা দালানকোঠায় বসবাস করে অট্টালিকার মধ্যে থাকে তারা হয়তো এই দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের সম্পর্কে ধারণা রাখেনা। সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 last month 

এই প্রচণ্ড গরমের দিনে আমার আব্বু অনেক পরিশ্রম করে আমাদের কৃষি জমিতে। আমি বুঝি এই রোদ গরমে কষ্ট করার অনুভূতি কেমন। কারণ আমার আব্বা প্রায় কুড়ি বিঘা মত আবাদ করে। অবশ্য লেবার দিয়ে কাজ করায়। তবে নিজেও তাদের সাথে কাজ করে দেখাশোনা করে। আর এই প্রচন্ড গরমের দিনে কতটা কষ্ট করতে হয় এসব মানুষগুলোর তা আমি বুঝি। খুব সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে পোস্ট লিখেছেন আপনি। আল্লাহ যেন খুব শীঘ্রই এই দুর্যোগ দূর করে দেয়।

 last month 

প্রচন্ড গরম আর তাপদাহে পুরো দেশ অতিষ্ঠ।স্বস্তি মিলছে না যেনো কিছুতেই। আর দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করতে দিনমজুরদের পথে -ঘাটে কাজ করে যেতে হয়।আমি আপু আমাদের বাসার খালাকে বলি ফ্যানের নিচে বসে রেস্ট নিতে।তাকে ঠান্ডা তরমুজ,শরবত দেই।আমি মনে করি আমাদের মতোই তাদের শরীর।গরমে আমার যেমন কষ্ট হয় তার ও হয়।আমি বাইরে গেলে রিকশা থামিয়ে আইসক্রিম কিনলে রিকশাওয়ালা মামাকে ও একটি দেই।আসলে আমরা আমাদের প্রত্যেকের জায়গা থেকে যদি একটু একটু করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই তখন আর কেউ কষ্টে থাকবে না।সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার মাঝে আনন্দ আছে।এটা সবাই বুঝতে চায় না।

 last month 

খুবই দারুণ একটা পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপু আপনার এই পোস্টটা একদম বাস্তব সম্মত। দিনমজুররা সারাদিন পরিশ্রম করে সারাদিন পরিশ্রম করার পরে যে অর্থটা তারা পায় এই অর্থটা যখন তারা দেখে তখন তাদের মুখে এক হাসি ফোটে আর এই হাসি যেন লাখ টাকা দিয়েও কেনা যায় না। এই মানুষগুলো এত বেশি পরিশ্রম করে তারপরও যেন এই মানুষগুলোর কোন ক্লান্তি নেই, প্রতিদিনের ন্যায় তারা তাদের কাজকর্ম করে যাচ্ছে আসলে তাদের প্রতিও মালিকপক্ষকে সদয় হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ধন্যবাদ সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last month 

আপু আপনার পোষ্টটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো। এখন যে অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি তাতে এই অসহায় দিনমজুর মানুষগুলোর অবস্থা সত্যিই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। তারা কাজ না করে ঘরে বসেও থাকতে পারছে না ।আবার এই তীব্র গরমে কাজ করতেও খুবই কষ্ট হচ্ছে। যাদের কথা ভাববার কোন মানুষ নেই। তারপরেও বেঁচে থাকার তাগিদে তাদের কাজ করে যেতেই হচ্ছে। বেশ ভালো লাগলো আপনার পোস্টের বিষয়টি। ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.11
JST 0.030
BTC 68500.64
ETH 3751.22
USDT 1.00
SBD 3.65