|| একটি ভয়াবহ ঝড়ের রাতের গল্প ( দ্বিতীয় পর্ব) ||
নমস্কার বন্ধুরা
গত পর্বে যেখানে শেষ করেছিলাম -
ঝড়ের রাতে আমাদের খাওয়া দাওয়া প্রায় উড়ে গেছিল বললেই চলে। তারপর যেহেতু বাবা বাইরে ছিল এজন্য আরো বেশি টেনশন হচ্ছিল। আর ওদিকে বাবারও আমাদেরকে নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা হচ্ছিল। সব থেকে ভয়ংকর ছিল আমরা যে বিল্ডিংয়ে ছিলাম সেই বিল্ডিংটাকে নিয়ে।
তারপর থেকে -
আমরা যে বিল্ডিংটাতে ছিলাম সেটা ছিল বহু পুরনো একটা বিল্ডিং। যাইহোক ঝড়ের রাতের প্রচন্ড ঝড়ু হাওয়ায় রান্নাঘরের দেয়ালের একটা অংশ রীতিমত কাঁপতে লাগলো। মনে হচ্ছিল এই বুঝি ভেঙ্গে নিচে পড়ে যায়। তাছাড়া বাড়ির সামনের যে ব্যালকনি ছিল সেখানেও বেশ নড়বড়ে অবস্থা ছিল। সুতরাং অনেকটাই টেনশন হচ্ছিল যে এই দুই জায়গা ঝড়ের কারণে ভেঙে না যায়। যেহেতু ঘরের ভিতরে প্রচন্ড গতিতে বাতাস ঢুকছিল এই জন্য আরো বেশি টেনশন হচ্ছিল। আসলে ওই মুহূর্তে বাবাকেও বারবার ফোন করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না।
অনেক কষ্টের পর বাবাকে ফোন করায় তিনি জানায় যে দোকানের সামনে টিন, গাছের বড় বড় ডাল ভেঙে পড়ছে শুধু। এই অবস্থায় এখান থেকে বেরোনো একেবারে অসম্ভব। যে করেই হোক ভগবানের নাম করতে করতে ঘরের ভিতর চুপ করে বসে থাকতে হবে। কি আর করা যাবে? আমি আর মা ঘরের ভেতর চুপটি করে বসে থাকলাম। এদিকে বাইরে প্রচন্ড বজ্রপাত এবং মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙে আমাদের বাড়ির সামনে এসে পড়ছে। শুধু যে এখানে থেমে রয়েছে তা কিন্তু নয়, ঘরের একটা জানালা দিয়ে দেখতে পারলাম যে পাশের দুটো তিনটে বাড়ি অলরেডি ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা এবং যাদের বাড়িতে টিন ছিল সেগুলো সব উড়ে অন্য কোথায় চলে গেছে। আমাদের বাড়ির ঠিক দুটো বাড়ির সামনে একটা একতলা বিল্ডিং ছিল সেখানে দেখলাম যে একটা নারকেল গাছ ভেঙে একদম বিল্ডিং এর উপরে পড়েছে। বাইরের মানুষের করুন অবস্থা দেখে অনেকটাই কষ্ট লাগছিল। আর ভয় লাগছিল ভীষণ।
যাইহোক সবকিছু দরজা-জানলা বন্ধ করে আমরা একদম রান্না ঘরের পাশের রুমটাতে এসে বসে পড়লাম। এরই মাঝে হঠাৎ করেই ঘটলো একটা দুর্ঘটনা। আমাদের বিল্ডিং এর উপর থেকে বড় একটা সিমেন্টের দলা আমাদের ঠিক সামনে এসে পড়ল। কিছু না হলে অন্তত ৫ কেজি ওজন হবে। যেহেতু পুরনো বিল্ডিং ছিল এজন্য ছাদের উপর যে সিমেন্ট বা বালি লাগানো হয়েছিল সেগুলো অনেকটাই ফেটে ফেটে গেছিল আর হঠাৎ করে ঝড়ু হাওয়া হওয়ার কারণে এবং ছাদ ভিজে যাওয়ার কারণে এই অঘটন ঘটেছে। আর এক হাত সামনে পিছনে পড়লে সেটা হয়তো মায়ের মাথার উপর অথবা আমার মাথার উপর পড়তো, এক্ষেত্রে রক্তপাত নিশ্চিত ছিল। কি আর করা যাবে আমরা অনেকটাই ভয় পেয়ে গেছিলাম। এরপর দেখতে লাগলাম যে বিল্ডিং এর আর কোথায় কোথায় ফাটা আছে, সেখান থেকে অনেকটাই দূরত্ব বজায় রেখে একটা নিরাপদ জায়গায় গিয়ে দুজন বসলাম।
প্রথমে তো ভেবেছিলাম কোন উপায় না পেলে খাটের নিচে গিয়ে দুজন থাকবো, মাথাটা অন্তত বাঁচবে। যাইহোক এই কথা চিন্তা করতে না করতেই আরও তিন চার জায়গা থেকে সিমেন্টের দলা ভেঙে রুমের ভিতরে পড়ল। আমরা তো ভেবেছিলাম হয়তো বিল্ডিংটাই মাথার উপর ভেঙে পড়ে যাবে। এরই মাঝে দেখলাম যে বাবা হঠাৎ করে ফোন করেছে এবং বলছে যে বাবা বাড়ি চলে আসছে। কিন্তু মা দেখলাম বলল যে না এখন বাইরে বেরোনোর দরকার নেই আমরা ভালো আছি। ঝড় যদি একটু কমে তারপর তুমি বাড়ি এসো। তার আগে বাড়ি একদমই আসবে না। আমাদের বাড়ির সামনে একটা নারকেল গাছ এবং একটা কুল গাছ ছিল হঠাৎ করেই কুল গাছের একটা ডাল ভেঙে প্রচন্ড গতিতে আমাদের ব্যালকনিতে এসে পড়ল।। এইসব দেখতে দেখতে আসলে আমরা মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলাম।
চলবে....⏩
পোস্ট বিবরণ | গল্প |
---|
https://twitter.com/GhoshPuja2002/status/1788949047761330210?t=a2Ma9i6R5sX05aAzT8stsQ&s=19
আমি আপনার এই গল্পের প্রথম পরবর্তী ও পড়েছি আপু এবং এই পর্বটিও পড়লাম তাতে আপনি যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন ঝড়ো বৃষ্টির পড়ে মনে হচ্ছে আপনারা একদম কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। পুরাতন বিল্ডিং গুলো আসলেই এরকম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পর্বের জানিনা পরবর্তী পর্বে আরো কি কি বিষয় অপেক্ষা করতেছে।
হ্যাঁ ভাই, পুরনো বিল্ডিং গুলো আসলে ঝড়-বৃষ্টির সময় খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। যাইহোক পোস্টটি পড়ে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
আমিও ঠিক এমনই ভয়াবহ ঝড়ের মুহূর্তে পড়েছিলাম আপু। তবে আজকে আপনার এ ঘটনা পড়তে গিয়ে আমার সেই অতীতের ঘটনা মনে পড়ে গেল। সুযোগ পেলে আমিও আপনাদের মাঝে শেয়ার করব সেই দিনের কথা। যাইহোক আপনার লাইফের ঘটনাটা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো, বেশ কিছু জানতে পারলাম।
আপনার ঘটনাটিও পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ভাই। আশা করছি আপনিও সেটি পোস্ট করবেন শীঘ্র।
খুবই রোমাঞ্চকর একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপনি। পড়ে ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।
অবস্থা টা তো আসলেই খুবই ভয়াবহ ছিল আপু। ঐরকম ঝুকিপূর্ণ বাড়িতে ঝড়ের সময় বসবাস করা। তার উপর ঐরকম সিমেন্টের দলা ভেঙে পড়া। ভাগ্যিস আপনাদের শরীরের উপর পড়ে নি। এমনটা তো যেকোনো মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভয়ের। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম আপু।
হ্যাঁ ভাই, বাড়িটি অনেক পুরোনো হয়ে যাওয়ায় আমাদের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ধন্যবাদ আপনাকে,সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য ।
প্রথম পর্বেই যখন পুরনো বিল্ডিং এর কথা শুনেছিলাম, তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে এরকম ভেঙে পড়ার মত কোন একটা ঘটনা অবশ্যই ঘটবে। যাইহোক, সিমেন্টের দলা যে তোমাদের কারো মাথায় পড়েনি, এটাই অনেক বড় ব্যাপার দিদি। তারপরে আবার তোমার বাবাকে এই ঝড়ের রাতে দোকান থেকে তোমার মা আসতে বারণ করে দিয়ে ঠিক কাজ করেছিল বলে আমি মনে করি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দিদি। এখন দেখা যাক, সেই পর্বে আর কি অভিজ্ঞতার কথা জানা যায় আপনার ।
হ্যাঁ ভাই, ঝড়ের মধ্যে আসলে না বেরোনোই ভালো। পরবর্তী পর্বটি শীঘ্রই পোস্ট করব। ধন্যবাদ আপনাকে,সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।