বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আমার প্রথম দিনের শপিং এক্সপেরিয়েন্স

in আমার বাংলা ব্লগlast year

IMG_20230101_212605.jpg


প্রথম দিন ঢাকায় এসে সন্ধ্যার দিকে ভাবলুম একটু শপিংয়ে যাই । সব চাইতে কাছাকাছি যে শপিং মল আছে সেখানে যেতে চাইলাম । ড্রাইভার জানালো যে শপিং মল এর চাইতে খুব কাছাকাছি একটা কনভিনিয়েন্স স্টোর আছে, সেখানে যাওয়া যেতে পারে । যেহেতু এই কনভিনিয়েন্স স্টোরটা আমাদের খুবই কাছাকাছি হয় তাই রাজি হলুম ।

সন্ধ্যায় বেরিয়ে দেখি ও মা ! এ কি জ্যাম রে বাবা ! ড্রাইভার সবিনয়ে জানালো আজকে জ্যাম তেমন নেই । অন্যদিন অনেক বেশি থাকে । শুনে তো মাথা ঘুরে গেলো । বলে কি ? এ জ্যাম নাকি কোনো জ্যামই নয় । বাপ্ রে । যাই হোক জ্যাম না থাকলে মোটে মিনিট সাত আটের রাস্তা । একটু জ্যাম ছিল তাই পৌঁছতে তিরিশ মিনিটের মতো লাগলো ।

কনভিনিয়েন্স স্টোরটার নাম ছিল Unimart । আকারে বেশ বড় । তবে পার্কিং লট ছোট ছিল বেশ । গাড়ি পার্ক করে তো ঢুকলুম শপিং সেন্টারে । অনেকগুলি ফ্লোর । এক একটা ফ্লোর বিশাল আয়তনের । একটা ফ্লোরে জামা কাপড়, একটাতে গ্রোসারি, একটাতে বাচ্চাদের খেলনা, একটাতে মাছ মাংস, একটাতে ফলমূল আর একটাতে সৌখিন জিনিসপত্র ।

গোলটুকে শপিং কার্টে বসিয়ে কেনাকাটা শুরু করলাম । রং পেন্সিল, আর্ট বুক, জেল পেন, ব্লকস সেট আর একটা বাস্কেট বল । এরপরে এক একটা ফ্লোরে যাই আর টুকটাক জিনিস কিনি । কোল্ড ড্রিঙ্কস, জুস আর কিছু ফলমূল, চকোলেট কিনলাম । ফলের দোকানে গিয়ে দেখলাম কলকাতার ১০-২০ গুণ বেশি দাম । আমাদের কলকাতায় এক ডজন কমলালেবুর দাম ৭০-৮০ টাকা । এখানে ৭ টা লেবুর দাম ২৪৫ টাকা । পাঁচশো গ্রাম চেরির দাম কলকাতায় ৫০০ টাকা । আর এখানে আড়াইশো গ্রাম চেরীর দাম ৫,০০০ টাকা ।

দাম দেখে মাথা ঘুরে ঠাস করে পড়ে যাচ্ছিলাম । যাই হোক কোনোক্রমে সামলে নিয়ে আর কোনোদিকে না তাকিয়ে মাছের ফ্লোরে গেলাম । সেখানে এক কিলো গলদার দাম দেখে আরেক প্রস্থ মাথা ঘুরে গেলো । তাই আর কোনোদিকে না তাকিয়ে চেক আউট এ চলে গেলাম ।

এই বার সেখানে বিল করার পরে আমার হার্ট এট্যাকের মতো অবস্থা হলো । যেসব জিনিসপত্র কিনেছিলাম কলকাতায় তার দাম বড়জোর ৪,০০০।= টাকা হবে । এখানে হলো ১৮,৫৩২।= টাকা । আমার একটা বদভ্যাস হলো জিনিসপত্র কেনার সময় প্রাইস ট্যাগ দেখি না । তারপরেও লেবু, চেরি আর গলদার প্রাইস দেখে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল । কিন্তু, ততক্ষণে সব জিনিস কিনে কার্ট বোঝাই করা হয়ে গিয়েছিলো । ওখান থেকে একটা পেন্সিল তুলতে গেলেই গোলটুবাবু কুরুক্ষেত্র করবে ।


IMG_20230101_212527.jpg


যাই হোক বিল মিটিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে প্রত্যেকটা জিনিসের প্রাইস ট্যাগ দেখে মাথা ঘুরে গেলো । পুরোনো ট্যাগের ওপর unimart তাদের নিজস্ব ট্যাগ মেরে দিয়েছে ।যে জিনিসের দাম ২০০ টাকা তার প্রাইস ট্যাগের ওপর unimart স্টিকার মেরে দিয়েছে ১,২০০ টাকা । মাত্র ৩২ টাকা জেল পেনের উপরে ১৩২ টাকার প্রাইস ট্যাগ মেরে দিয়েছে । এক ডজন জেল পেনের প্রাইস যেখানে সর্বোচ্চ ৩৮৪ টাকা সেখানে এক একটা জেল পেন ১৩২ টাকা দাম রেখেছে । আরেকটা মজার ব্যাপার হলো অধিকাংশ জিনিসপত্র made in India ট্যাগের ওপর unimart ট্যাগ মারা । made in China প্রোডাক্ট কমই দেখলাম ।

শেষমেশ বলবো ঢাকায় আমার শপিং এক্সপেরিয়েন্স খুবই নিদারুণ ছিল । কেমন যেন ডাকাত ডাকাত গন্ধ পেলুম । এরপরের দিন নিউ মার্কেটে গিয়ে খাবারের দাম দেখে আমার আক্কেল গুড়ুম । এক পিস্ চিকেন স্যান্ডউইচ ২৪০ টাকা । মরে যে যাইনি এই ঢের !

Sort:  

Can you earn
Screenshot_20230103-155936_1672742112461.jpg

 last year 

দাদা আপনি ঢাকায় এসেছেন যেনে খুবই ভালো লাগলো। আপনাকে প্রথমেই ঢাকায় আসার জন্য স্বাগতম জানাই, আর আপনার পোস্টটি পড়তেছিলাম আর হাসতে ছিলাম। আসলে দাদা আমাদের দেশে যেন দিনে দুপুরে ডাকাতি চলছে। প্রতিটা জিনিসের দাম এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা বলার মত না। রাত পোহালেই যেন জিনিসের দাম বৃদ্ধি পায়। আর কলকাতার চাইতে আমাদের এখানে এত গুণ বেশি দাম আপনার পোস্ট না পড়লে আপনাকে বুঝতে পারতাম না। আমাদের দেশের মানুষ কি পরিমান যে ডাকাতি করছে। আসলে আমাদের দেশটা যেন ডাকাতে ভরে গেছে। জিনিসপত্রের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

This post has been upvoted by @italygame witness curation trail


If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness




CLICK HERE 👇

Come and visit Italy Community



Hi @rme,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.

Come and visit Italy Community

 last year 

এই ডাকাতের দেশেই আমাদের বসবাস। তাহলে বোঝেন দাদা আমরা কিভাবে সারা বছর চলি। এজন্যই তো অনেকে সময় সুযোগ পেলেই ইন্ডিয়াতে চলে যায় শপিং করার জন্য। ঘুরা হয়ে যায় আবার কেনাকাটা হয়ে যায় বাংলাদেশের শপিং এর টাকা দিয়ে। আর এই বড় বড় দোকানগুলোতে অবস্থা আরো খারাপ। যাক শপিংমলের মধ্যে যে মাথা ঘুরে পড়ে যাননি এই অনেক। সুস্থ মতো বাসায় ফিরতে পেরেছেন তাই বা কম কিসের।

 last year 

আমাদের জন্য এসব ডাল ভাত ব্যাপার, এই সব সমস্যা আম্রা প্রতিদিনিই সহ্য করে যাচ্ছি। বিষেশ করে জিনিস পত্রের দাম আকাশ ছোয়া। আর জ্যাম সেটা ত ঢাকাই প্রতিদিনকার ঘটনা।

 last year 

তাহলে তো আমাদের প্রতিদিনই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার কথা আমরা তো প্রতিদিনই এসবের সম্মুখীন হচ্ছি। মানুষ ইন্ডিয়া যায় শপিং করতে আর আপনি বাংলাদেশ থেকে কেন যে এসব জিনিস কিনলেন আমি তো তাই বুঝলাম না। আমাদের দিনের ভিতরে ১০০ বার হার্ট অ্যাটাক হয় এসব জিনিসের দাম দেখে তারপরে কিছুই করার নেই কিনতেই হয়। বাংলাদেশের শপিং করার দারুন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন দাদা। যদিও uinimart আমি কখনো যাইনি আমাদের বাসা থেকে অনেক দূর।

 last year 
ঢাকায় সুস্বাগতম দাদা

প্রথমেই আপনার ভ্রমন সুখকর হোক এই কামনা করছি ❤️

হা হা 😄
দাদা এই ডাকাতের শহরে বাস করছি দীর্ঘদিন, কি যে কষ্টের ভেতরে দিন যায় বলাবাহুল্য। এখানে টাকা ছাড়া একটা পা ফেলা মুশকিল আর জিনিসপত্রের দাম প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। সবথেকে যেটা কষ্টের ব্যাপার জিনিসের মানের থেকে দাম আকাশ পাতাল ফারাক।

দোয়া করছি দাদা ভালো সময় কাটুক আপনাদের ❤️

 last year 

দাদা ঢাকা শহরে তো ছোটখাটো জ্যাম সব সময় লেগেই থাকে বড় ধরনের জ্যামে পড়লে বুঝতে পারতেন ঢাকা শহরে যাতায়াত করা কি কষ্টের। তাছাড়া শপিং করতে গিয়ে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম আপনাদের তুলনায় ১০ থেকে ২০ গুণ এখন আমাদের কাছে এটা কিছুই মনে হয় না। যেটা আপনি এক্সপেরিয়াম্যান্ট করেছেন প্রত্যেকটা জিনিসের দাম অনেক বেশি যেটা কল্পনার বাইরে। বিভিন্ন ফলের দাম আকাশচুম্বি দারিদ্র শ্রেণীর মানুষের খাওয়ার বরাত নেই। যাইহোক, অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন দাদা আমাদের দেশে এসে এই ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য ধন্যবাদ।

 last year 

হাহাহা।দাদা কি বলবো আপনার শপিংয়ের স্টোরিটা পড়তেছি আর হাসতেছি। আপনি ঢাকায় শপিং মলে যে দাম দেখেছেন,এরপর আমাদের এরিয়াতে দাম দেখলেতো টাসকি খেয়ে যেতেন।ঢাকা থেকে আমাদের ফেনীতে জিনিসপত্রের আরো বেশি দাম নেয়। যাইহোক দাদা আপনি বাংলাদেশে এসেছেন এবং আমাদের দেশকে ঘুরে দেখছেন এটা আসলে অনেক ভালো লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.12
JST 0.033
BTC 70999.72
ETH 3678.24
USDT 1.00
SBD 3.81