বিয়ের গিফট এবং বিড়ম্বনা
হ্যাল্লো বন্ধুরা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। এমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলে এমন গরমের মাঝেও ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে পরিবারসহ বেশ ভালোই আছি। আজ আবারো আপনাদের সামনে হাজির হলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। রিসেন্টলি আপনারা জানেন আমার বড় ভাই/ দাদার বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সেটার গিফট রিলেটেড কিছু অভিজ্ঞতাই আপনার সাথে শেয়ার করতে চলেছি আজকের পোষ্টে।
জানুয়ারিতে আমার এক কাজিনের বিয়ে ছিলো। তার জন্যই গিফট কিনতে গিয়ে উপরের সেটটার প্রতি আমার চোখ একেবারে লেগে গিয়েছিলো। মানে সেটটি দেখেই আমার ভীষণ ভালো লেগেছিলো। কিন্তু চাইলেই তো আর এমন শখ গুলো পূরণ করা হয় না। আমাদের আগেই আরেকজন আপু সেই সেটটি বুকিং দিয়ে ফেলেছিলেন। তাই আমি সেদিন রেফারেন্স এর জন্য সেটটার ছবি তুলে রেখেছিলাম। কিন্তু এর প্রায় দুই মাস পরেই যখন নিজের দাদার বিয়ে ঠিক হলো, আমি তখন থেকেই ভেবে রেখেছিলাম নতুন বৌদিকে এই পছন্দের সেটটাই দিবো! যেই ভাবা সেই কাজ! সময় থাকতে থাকতেই চলে গেলাম সেই স্বর্ণকারের দোকানে, রেফারেন্স এর ছবিটা দেখিয়ে অর্ডার দিয়ে দিলাম। কথা হলো, এক সপ্তাহ পরে রেডি হয়ে যাবে।
আমাদের অর্ডার করার এক সপ্তাহের মাঝেই সেটটি রেডি হয়ে যায়। আমাদের সাথে যোগাযোগ করে জানান যে পরের দিন চাইলে আমরা সেটটি নিতে পারবো। আমি তো ভীষণ খুশি। সাহেবের অফিসে যাওয়ার পথেই পরে দোকানটি। তাই সাহেব অফিস যাওয়ার সময়ে কালেক্ট করে নেন এবং সেখান থেকে অফিসে চলে যান। অফিস শেষে বাসায় ফিরে যখন আমার হাতে বক্স টি দেন, বক্স খুলে আমার তো চক্ষু চড়কগাছ!!
বক্স খুলে দেখি মালা তো ঠিকঠাক ই আছে, তবে একটি দুল মাঝ থেকে এমন ভাবে বেঁকে গেছে!! আরেকটু হলেই ভেঙে যাবে- এমন অবস্থা! আমার তো প্রায় কান্না চলে এসেছিলো সেই অবস্থা দেখে!! কীভাবে হলো কিছুতেই মাথায় আসছিলো না। কারণ সাহেব এর ভাষ্যমতে তো উনি যখন রিসিভ করেছেন, তখন ঠিকঠাক ই ছিলো। তারপর এর এই এখন খোলা হলো! মাথায় হাত রেখেই সাথে সাথে কল দিলাম সেই স্বর্ণকার দাদাকে! যেহেতু আগেও উনার থেকে জিনিস কেনা হয়েছে, উনি মোটামুটি পরিচিতই। ফোনে সব শুনলেন, শুনে ম্যাসেঞ্জারে ছবি দিতে বললেন। দিলাম ছবি। ছবি দেখেই উনি বক্সের ছবিও দেখতে চাইলেন। সেটাও দিলাম।সেই ছবি দেখে উনি নিজেই সাথে সাথে আমাদের কল দিলেন।
আমি তো ওদিকে ভাবছি -এখন কি হবে! নতুন করে আবার বানানো বা এটা রিপেয়ার মানেই আবারো নতুন করে কতগুলো টাকা গচ্ছা! কিন্তু স্বর্ণকার দাদা ফোন দিয়ে যেটা বললেন, তাতে আসম্ফলেই চিন্তার ভার অনেকখানি কমে গেলো! ঘটনা হয়েছে, যখন আমার সাহেব দোকান থেকে রিসিভ করেছেন ঠিকঠাক দেখে, তখন দোকানের মালিক ছিলেন না, ছিলেন উনার ছোট ভাই। সেই ছোট ভাই আবার এই লাইনে কাজের তেমন অভিজ্ঞতা নেই, একদম ই নতুন। উনি ডেলিভারি দিয়েছেন ঠিকই, তবে বক্সে যেখানে কানের দুল রাখার জায়গা, সেটা কিছুটা অংশ কেটে দুলজোড়া সেখানে ঢুকিয়ে দিতে হতো, সেই ছোটভাই সেটা সেভাবে জানতেন ও না, খেয়াল ও করেন নি। যেহেতু কানের দুলের ওখানে কোন ফুটো ছিলো না, তাই লাগানোর সময়ই চাপ লেগে দুলের এই বেহাল অবস্থা হয়েছে। যেহেতু উনাদের ই ভুলে এই অবস্থা, উনি নিজের থেকেই সেটা ঠিক করে দিবেন বললেন। আসলে এই একই সেট উনি একসাথে দুইটা বানিয়েছিলেন। কানের দুলটা উনি সেই সেকেন্ড সেট থেকে এক্সচেঞ্জ করে দিবেন বললেন, কোনো এক্সট্রা চার্জ ছাড়াই। পরের দিন সকাল সকাল আবারো উনাদের দোকানে গেলাম, এবার আমিও গেলাম সাথে। উনার ছোটভাই এর সাথেও পরিচয় হলো। দুইজনেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলেন। এবং আসল মালিক তার ছোট ভাইকে আমার সামনেই দেখিয়ে দিলেন কীভাবে বক্সের দুল রাখার জায়গাটায় কেটে সেখানে দুল রাখতে হয়। এটাও বললেন, যদিও উনার কোন চার্জ ছাড়া এক্সচেঞ্জ করে দেয়ার কারণে ক্ষতিই হলো, তবুও ভুলটা যেহেতু উনাদের পক্ষ থেকেই হয়েছে, তাই সেটা উনাদের ই ম্যানেজ করে নিতে হবে। এই বিষয় টি আসলে উনি বক্সের ছবি দেখেই ধরতে পেরেছেন। এরপরেও যদি উনি স্বীকার না করতেন, তবে আমার পক্ষে কিন্তু ধরা সহজ হতো না। উনারা যে নিজেদের ভুল স্বীকার করে আফটার সার্ভিসটা দিলো, এর ফলে উনাদের প্রতি আস্থার জাগয়াটা আরো শক্তই হলো। আসলে ব্যবসা তো আর একদিনের জন্য না। পরবর্তীতে যদি আমার বা আমার পরিচিত কারোর গোল্ডের কিছু নেয়ার প্রয়োজন পরে, উনাদের কথাই আমার মাথায় আসবে এবং আমি সাজেস্ট ও করবো। এবং পাশাপাশি এটাও মাথায় এলো, প্রত্যেক ব্যবসায়ীই যদি সৎ হতো, তবে আমাদের চারপাশের অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যেতো!
আজ এপর্যন্ত থাকলো। এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
গয়নার সেটটি দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দর আপু। পছন্দের এই গয়নার সেটটি দাদার বিয়েতে বৌদিকে গিফট করেছেন জেনে অনেক ভালো লাগছে। তবে দোকানদারের ব্যবহারটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। তিনি যে ভুল স্বীকার করেছেন এবং পরবর্তীতে কানের দুলটা চেঞ্জ করে দিয়েছেন। সত্যিই দোকানদারের প্রশংসা করতে হয়।
গয়নার সেটটি আমার চোখেই লেগে ছিলো আপু! সিম্পলের মাঝে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছিলো। তাই সুযোগ পেয়ে নিজের পছন্দের সেটটি বৌদির জন্য নিয়ে নিলাম।
পছন্দের এবং নতুন একটা জিনিস এরকম হলে আসলেই খুব কষ্ট লাগে। তার ওপর আবার গিফট দিবেন। অবশ্য দোকানদার যদি এটা স্বীকার না করত তাহলে কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষ জনের কাছে এই জিনিসটা ধরা পড়া সহজ নয়। একেবারে অসম্ভব বলা যায়। তবে তারা তাদের ভুল স্বীকার করে নিজেরাই সবকিছু ঠিকঠাক করে দিয়েছে। আসলে এরকম না হলে তাদের প্রতি আপনাদের যে আস্থা রয়েছে সেটা উঠে যেত। যাইহোক, সেটটা আসলেই খুব সুন্দর আপু।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। আসলেই আমরা তো বুঝিই নি কীভাবে হলো এমন। অথচ স্বর্ণকার দাদা ছবি দেখেই এমন হওয়ার কারণ বুঝে গিয়েছিলেন তার অভিজ্ঞতা থেকে। আসলেই উনার এমন আচরণে উনার প্রতি আস্থা অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
দিদি, বিয়ের গিফট ও বিলম্বনার ঘটনা পড়ে বেশ বুঝতে পারলাম, স্বর্ণকার দোকানদার দাদা খুবই ভালো মনের মানুষ। যার কারণে আপনাদের গয়নার বক্সটি দেখে, নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ভুল স্বীকার করেছে এবং আপনাদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। এমন মানুষ খুব সহজে পাওয়া যায় না। অন্য কোন স্বর্ণকার হলে হয়তো দোষটা আপনাদের উপরেই চাপিয়ে দিত। যাইহোক দিদি, অবশেষে আপনাদেরকে আর নতুন করে টাকা গচ্ছা দিতে হয়নি এটা জেনে বেশ ভালো লাগলো। আর হ্যাঁ দিদিভাই, গয়নার সেটটি সত্যিই খুব খুব সুন্দর। আপনার মত আমার কাছেও দেখে খুবই পছন্দ হয়েছে।
আসলেই উনারা স্বীকার না করলে এক্সট্রা টাকা দিয়েই জিনিসটা ঠিক করে বা এক্সচেঞ্জ করে নিতেই হতো! ওমন জিনিস তো আর দেয়া যায় না। তবে মানতেই হবে, উনারা সততার পরিচয় দিয়ে মন জয় করে নিয়েছেন।
প্রথমেই বলবো বিয়ের জন্য গিপ্ট টি সত্যি অনেক সুন্দর। জুয়েলার্সের ওই দাদার ছোট ভাইয়ের দক্ষতার অভাবে কি ভাবে বক্সে সেট করতে হয় তা না জানার ফলে কানের দুলের বেহাল দশা হয়েছিলো।ভালো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের ভুল স্বিকার করতে একদমই দেরি করেন না।ধন্যবাদ পোস্ট টি শেয়ার করে আমাদের সাথে কথা গুলো ভাগ করে নেয়ার জন্য।
এনন দারুণ মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ তোমাকে।