নতুন প্রবীণদের নিয়ে আমার লেখা ছোট একটি গল্প - পর্ব ০২
নিউমার্কেটের এক নম্বর গেটে মামুনকে দেখে চমকে উঠলো সুলতানা ৷ মাথা ভর্তি চুল, মুখে দাড়ি আর মোটা ফ্রেমের চশমাপরা মামুনকে চিনতে একটুও কষ্ট হয়নি । ভিড় এড়িয়ে দ্রুত কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছ মামুন? মামুন অপলক তাকিয়ে রইলো । বৈশাখী বিকেলের রোদ সুলতানার মুখে পড়ছে । ব্যাগ হাতে মামুন কাঁপছে । সুলতানা মামুনের হাত ধরে ফাস্টফুডের দোকানের সামনে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসিয়ে দিল। ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছিয়ে দিল। ফাস্টফুডের দোকান কর্মচারী এসে জিজ্ঞেস করলো, আন্টি আপনাদের কী দিব? সুলতানা বললো দু গ্লাস বেলের শরবত আর এক বোতল পানি দাও ৷ , মামুনের দিকে তাকিয়ে সুলতানা বললো, তুমি এতটা রোগা হলে কী করে? কতদিন পর দেখা হলো? বেলের শরবতটুকু শেষ করে মামুন বললো, চুয়াল্লিশ বছর পর ।
বিয়ের আগের দিন আমাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে চোখের পানি ফেলে বিদায় নিয়েছিলে। সুলতানা বললো, এতোকাল কোথায় কাটালে? মামুন বললো, কুড়িগ্রাম পিটিআই থেকে বছর সাতেক আগে ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে অবসর গ্রহণ করলাম। বছরখানেক ধরে বড় ছেলের বাসায় থাকি। ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নিউমার্কেট বন্ধ না থাকলে প্রায় প্রতিদিনই যেখান থেকে তুমি আমাকে বিদায় দিয়েছিলে সেখানেই ঘণ্টাখানেক কাটাই । গত এক বছরে কি একবারও নিউমার্কেট আসোনি ? আমি অনেককাল আমেরিকা ছিলাম। মাস তিনেক আগে ফিরেছি। আব্বার ধানমন্ডির বাড়িটা ডেভেলপারকে দেয়া হয়েছিল। আমি দুটো ফ্ল্যাট পেয়েছি। একটাতে আমি একাই থাকি । তারপর কথার ঝড় উঠলো। দুজনেই ফিরে গেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলে আসা দিনগুলোতে। নিউমার্কেটের এক নম্বর গেট হয়ে উঠলো নিত্য আড্ডার স্থান। প্রবীণ নরনারীর এই জোড়াকে অনেকেই ঈর্ষা করতে লাগলো ।